
u
متى ينفع الإنسان قول لا إله إلا الله
কখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললে তা ব্যক্তির উপকারে আসবে
আমরা পূর্বে বলেছি যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার সাথে এর অর্থ জানতে হবে এবং এর দাবি অনুযায়ী আমলও করতে হবে। কিন্তু যেহেতু কিছু বর্ণনা আছে যেগুলো থেকে মনে হতে পারে যে শুধু মুখে এর উচ্চারণ করলেই চলবে এবং কিছু মানুষ যেহেতু এই ভ্রমে আক্রান্ত হয়েছে, তাই যারা সত্য জানতে চায় তাদের ভ্রম দূর করার জন্য বিষয়টা স্পষ্ট করার দাবি রাখে। শাইখ সুলাইমান বিন ‘আব্দুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহ ইতবান রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসের ব্যাপারে বলেন, যেখানে আছে:
فإن الله حرم على النار من قال لا إله إلا الله يبتغي بذلك وجه الله
كان النبي صلى الله عليه وسلم ومعاذ رديفه على الرحل ، فقال : يا معاذ . قال : لبيك يا رسول الله وسعديك . قال : ما من عبد يشهد أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله إلا حرمه الله على النار
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাহনের উপরে ছিলেন আর মু‘আয তার পিছনে বসে ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে মু‘আয। মু‘আয বললেন : আপনার সেবায় আপনার খাদেম হাজির হে আল্লাহর রাসূল। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: যে কোনো বান্দা এই সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; আল্লাহ জাহান্নামের জন্য তাকে হারাম করে দিবেন।’’[2] আর ‘উবাদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে সহীহ মুসলিমে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত আছে:
ومن شهد أن لا إله إلا الله وأن محمدا عبده ورسوله حرمه الله على النار
“যে এই সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রাসূল; জাহান্নামের জন্য আল্লাহ তাকে হারাম করেছেন ।”[3] আরো কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুই কালিমার সাক্ষ্য দিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ঐ হাদীসগুলোতে এটা উল্লেখ নেই যে, জাহান্নামের জন্য সে হারাম হয়ে যাবে। এর মধ্যে আছে ‘উবাদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসটি যা আমি ইতঃপূর্বে উল্লেখ করেছি এবং আবূ হুরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস যেখানে তারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তাবুক যুদ্ধে ছিলেন। ঐ হাদীসে আছে:
فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أشهد أن لا إله إلا الله وأني رسول الله ؟ لا يلقى الله بهما عبد غير شاك فيحجب عن الجنة
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। যে এই দুই সাক্ষ্য নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে তাকে জান্নাত থেকে দূরে রাখা হবে না। [4]
শাইখ সুলাইমান বিন ‘আব্দুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “এই বিষয়ে সর্বোত্তম মত হলো যা শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ ও অন্যান্যরা বলেছেন, তারা বলেছেন: এই হাদীসগুলো শর্তযুক্তভাবে তাদের ব্যাপারে এসেছে যারা এই কালিমাহ পাঠ করেছে এবং এর উপরেই মৃত্যুবরণ করেছে। আর এই হাদীসগুলো তাদের ব্যাপারে এসেছে যারা কোনো রকম সন্দেহ ছাড়াই ইখলাস, দৃঢ় বিশ্বাস ও সত্যবাদিতার সাথে এই বাক্য বলে । কারণ তাওহীদের হাকীকত (প্রকৃত অবস্থা বা মূল বিষয়) হচ্ছে অন্তরসমূহকে সার্বিকভাবে আল্লাহর প্রতি ধাবিত করা। তাই যে অন্তর থেকে ইখলাসের সাথে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কারণ ইখলাস হলো আল্লাহর প্রতি অন্তরসমূহকে ধাবিত করা – তার কাছে আন্তরিকভাবে তাওবা করা। সে যখন এই অবস্থার উপর মৃত্যুবরণ করবে তখন সে তা (লা ইলাহা ইলাল্লাহ বলার ফযীলত) অর্জন করবে। কারণ অনেক হাদীসে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে তার অন্তরে যদি একটা যবের দানা পরিমাণ বা একটা সরিষা দানা পরিমাণ বা একটা অণু পরিমাণ কল্যাণ থাকে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মুতাওয়াতির সূত্রে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, যারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে তাদের মধ্যে অনেকেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে অতঃপর সেখান থেকে বের হবে। মুতাওয়াতির সূত্রে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা আদম সন্তানের সিজদার চিহ্নকে ভক্ষণ করা জাহান্নামের জন্য হারাম করেছেন। তারা সালাত আদায় করত এবং আল্লাহর জন্য সিজদা করত। আর মুতাওয়াতির সূত্রে এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর সাক্ষ্য দিবে তবে জাহান্নামের জন্য ঐ ব্যক্তি হারাম। কিন্তু এই হাদীসগুলো কঠিন কঠিন শর্তযুক্ত হয়ে এসেছে। যারা এই বাক্য বলে তাদের অধিকাংশই ইখলাস (একনিষ্ঠতা) কি, ইয়াক্বীন (দৃঢ়বিশ্বাস) কি তা জানে না। আর যে এটা জানে না তার জন্য আশঙ্কা হয় যে, সে মৃত্যুর সময় ফিতনায় পড়বে এবং তখন তার ও এই বাক্যের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।
যারা এই বাক্য বলে তাদের অধিকাংশই গতানুগতিক ও প্রচলিত প্রথা অনুসরণ করার কারণে তা বলে। ঈমান তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। যারা কবরে ফিতনায় পড়ে তারা অধিকাংশই এই ধরনের লোক যেমনটা হাদীসে বর্ণিত আছে:
سمعت الناس يقولون شيئا فقلته
“মানুষকে কিছু বলতে শুনেছি আমিও তাই বলেছি।” [5] অধিকাংশ আমলই অন্ধ অনুকরণ ও তাদের মতো (পথভ্রষ্ট) লোকদের অনুসরণ কোরে তারা সম্পাদন করে। আল্লাহর এই নিম্নোক্ত বাণীতে যা বলা হয়েছে তার (মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য ) এরাই সবচেয়ে নিকটবর্তী:
بَلْ قَالُوا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آثَارِهِمْ مُهْتَدُونَ
বরং তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এক দীনের উপরে পেয়েছি এবং নিশ্চয়ই আমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে হিদায়াত পাবো। [6] তাই বলা যায় যে, এই হাদীসগুলোর মধ্যে কোনো অসংগতি নেই। কারণ সে যদি ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ও পরিপূর্ণ ইয়াক্বীনের (দৃঢ়বিশ্বাসের) সাথে এই কালিমাহ বলে তবে সে ঐ অবস্থায় কোনো পাপে লিপ্ত থাকতে পারে না। কারণ তার পরিপূর্ণ ইখলাস ও ইয়াক্বীনের দাবি অনুযায়ী আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হওয়াটা অপরিহার্য হয়ে উঠে। তাই তার অন্তরে ঐ সকল জিনিসের আকাঙ্ক্ষা থাকে না যা আল্লাহ হারাম করেছেন এবং ঐ সকল জিনিসের প্রতি ঘৃণা থাকে না যা আল্লাহ আদেশ করেছেন – এই ধরনের মানুষকেই জাহান্নামের জন্য হারাম করা হয়েছে। যদি এর পূর্বে তার কিছু পাপ থেকেও থাকে তাহলে তার ঈমান, তাওবাহ, ইখলাস, ভালোবাসা, ইয়াক্বীন তার সকল পাপকে মুছে দেয়। কোনো পাপই তা অবশিষ্ট রাখে না। যেমনটা দিন (দিনের আলো) রাতকে মুছে দেয়।” শাইখ সুলাইমান বিন ‘আব্দুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহর বক্তব্য এখানে শেষ।
গ্রন্থ : মা’না লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া মুকতাদাহা ওয়া আসারুহা ফিল ফারদি ওয়াল মুজতামা’, পৃষ্ঠা: ৪৩-৪৭
লেখক: শাইখ সালিহ বিন ফাওযান বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান
প্রকাশনী : মদিনা ইউনিভার্সিটি, মদিনা। তৃতীয় সংস্করণ (১৪২২ হিজরী, ২০০২ খৃষ্টাব্দ)