Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর ব্যাখ্যা পার্ট-(৬)

Share On :

u

مقتضى لا إله الله في التشريع والأسماء والصفات

বিধান প্রণয়ন এবং আল্লাহ তাআলার নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাবি

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর আরো দাবি হলো ইবাদাত, লেনদেন, হালাল, হারামের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানকে গ্রহণ করা এবং অন্যদের বিধানকে পরিত্যাগ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন:

أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ ۚ

“নাকি তাদের কতক শরীক আছে যারা দীনে (ধর্মে) এমন বিধান প্রণয়ন করেছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি ?’’[1]

তাই ইবাদাত, লেনদেন ও মানুষের মধ্যে বিবাদের সময় বিচার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আল্লাহর বিধানকে গ্রহণ করতে হবে এবং মানবরচিত বিধানকে পরিত্যাগ করতে হবে। এর অর্থ হলো ইবাদাতের ক্ষেত্রে সকল প্রকার বিদআত ও কুসংস্কার যেগুলো মানুষ শয়তান ও জীন শয়তানরা সৃষ্টি করেছে ও প্রচলন করেছে সেগুলো পরিত্যাগ করতে হবে। যে এর মধ্য থেকে কোনো কিছু গ্রহণ করবে সে মুশরিক যেমনটা আল্লাহ তাআলা বলেন:

أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ ۚ

“নাকি তাদের কতক শরীক আছে যারা দীনে (ধর্মে) এমন বিধান প্রণয়ন করেছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি ?’’[2]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:

وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ

“আর যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক।’’[3]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:

اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ

“তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে।’’[4]

সহীহ হাদীসে আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আদী বিন হাতিম আত্ব-ত্বয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকটে এই আয়াতটা তিলাওয়াত করছিলেন। তখন ‘আদী বিন হাতিম আত্ব-ত্বয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমরা তো তাদের ইবাদাত করি না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তারা কি তোমাদের জন্য তা হালাল করে না যা আল্লাহ হারাম (অবৈধ) করেছেন অতঃপর তোমরাও তা হালাল (বৈধ) করে নাও ? আর তারা কি হারাম (অবৈধ) করে না যা আল্লাহ হালাল (বৈধ) করেছেন অতঃপর তোমরাও তা হারাম (অবৈধ) করে নাও ? ‘আদী বিন হাতিম আত-ত্বয়ী বললেন, হ্যাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটাই হলো তাদেরকে ইবাদাত করার অর্থ।’[5]

শাইখ আব্দুর রহমান বিন হাসান রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহর অবাধ্য হয়ে তাদের আনুগত্য করাই হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা। আর এভাবেই তারা তাদেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে। (তাদের) এই অবস্থা এই উম্মতের মধ্যেও বিদ্যমান আছে। আর এটাই বড় শিরক যা তাওহীদ তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ শাহাদাতের অর্থের পরিপন্থি …. তো স্পষ্ট হলো যে, কালিমাতুল ইখলাস (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এসকল বিষয়কে নাকচ করে দেয় কারণ তা এই কালিমার মর্মার্থের পরিপন্থি । এভাবেই মানব রচিত আইনের কাছে বিচার চাওয়াকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে কারণ আল্লাহর কিতাব থেকে বিচার নেওয়া ও অন্যান্য মানবরচিত আইনের কাছে বিচার চাওয়াকে প্রত্যাখ্যান করা ফরজ।

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:

فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ

“অতঃপর তোমরা যদি কোনো ব্যাপারে মতভেদ করো তবে তা আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও।’’[6]

আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِن شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّهِ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبِّي

“তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ করো তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে। তিনি আল্লাহ, আমার রব।’’[7]

যে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করে না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাকে কাফের, জুলুমকারী ও পাপাচারী বলেছেন এবং তার ঈমান থাকাটাকে নাকচ করেছেন। এটা থেকে বোঝা যায় যে, ফয়সালাকারী যদি আল্লাহর বিধান ব্যতীত অন্য কোনো বিধান দিয়ে ফয়সালা করে এবং সে যদি এভাবে ফয়সালা করাকে বৈধ মনে করে, অথবা যদি মনে করে যে, তার ফয়সালা আল্লাহর হুকুম থেকে অধিক শ্রেয় ও উত্তম তবে এটা কুফরী, শিরক, তাওহীদের পরিপন্থি ও তা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহকে পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়।

যদি সে এটাকে বৈধ মনে না করে এবং বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর বিধান দিয়েই ফয়সালা করা আবশ্যক ; কিন্তু প্রবৃত্তি তাকে (আল্লাহর) অবাধ্যতার দিকে নিয়ে যায় তাহলে এটা হবে ছোট কুফরী ও ছোট শিরক যা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর মর্মার্থ ও দাবিকে নষ্ট করে দেয়।

অতএব, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পরিপূর্ণ একটা পন্থা ; মুসলিমদের জীবনযাত্রা, ইবাদাত ও কর্মকাণ্ড সব ক্ষেত্রে এর কর্তৃত্ব থাকা আবশ্যক। এটা এমন কোন বাক্য নয় যেটা বরকত ও সকাল-সন্ধ্যার জিকিরে এর অর্থ না বুঝে, এর দাবি অনুযায়ী আমল না কোরে ও এর পথের উপর না চলে শুধু বারবার পাঠ করলেই হবে। যারা এই বাক্য বলে তাদের মধ্যে অনেকেই (তা মুখে বললেই চলবে) এমনটা ধারণা করে এবং তাদের (বাতিল) আক্বীদা ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই বাক্যের পরিপন্থি কাজ করে।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাবিসমূহের মধ্যে আরো আছে : আল্লাহ তাআলার ঐ সকল নাম ও গুণাবলিকে সাব্যস্ত করা যেগুলো আল্লাহ তাআলা তার নিজের সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন অথবা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا ۖ وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ ۚ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

“আর আল্লাহরই জন্য রয়েছে সমস্ত সুন্দর নামসমূহ। অতএব তোমরা ঐ নামগুলো দিয়েই তাকে ডাকো। আর যারা তার নামসমূহকে ইলহাদ (অস্বীকার) করে তাদেরকে পরিত্যাগ করো। তারা যা করত তার ফল তাদেরকে দেওয়া হবে।’’[8]

তিনি ফাতহুল মাজীদে বলেন, “আরবদের ভাষায় ইলহাদ শব্দের মূল হলো : মধ্যমপন্থা থেকে সরে আসা, ঝুঁকে যাওয়া, জুলুম করা ও বিচ্যুত হওয়া। আল্লাহ তাআলার সকল নামের মধ্যে তাঁর নাম ও গুণ অন্তর্ভুক্ত। এসব নামে তিনি তাঁর বান্দাদের কাছে পরিচিত এবং এ সকল নাম আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণতার দিকে নির্দেশ করে।”

তিনি আরো বলেন, “এই ইলহাদ (অস্বীকার/অবিশ্বাস) করা হয় হয়তো তার নামসমূহকে অস্বীকার করার মাধ্যমে নয়তো এই নামসমূহের অর্থ অস্বীকার করার মাধ্যমে ও এগুলোকে তা‘ত্বীল (নিষ্ক্রিয়/নামগুলো অর্থহীন দাবি) করার মাধ্যমে, নয়তো সঠিক অবস্থান থেকে সরানোর মাধ্যমে ও অপব্যাখ্যা কোরে হক থেকে বের করার মাধ্যমে এবং সৃষ্টির জন্য এই নামগুলো নির্ধারণ করার মাধ্যমে যেমনটা আহলুল ইত্তিহাদ (সর্বেশ্বরবাদীরা) করে থাকে। সৃষ্টির উত্তম ও নিকৃষ্ট সবার জন্য তারা এই নামগুলো নির্ধারণ করেছে।” শাইখের (আব্দুর রহমান বিন হাসান রহিমাহুল্লাহ) বক্তব্য এখানে শেষ…

ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “লোকেরা (আহলুস সুন্নাহ) অনেক ব্যাপারেই মতানৈক্য করেছেন কিন্তু তারা আল্লাহর সিফাতের (বৈশিষ্ট্যের) আয়াতগুলোর ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য করেননি। (অথচ কুরআন ও হাদীসে) এ বিষয়গুলো একই স্থানে আছে। বরং সাহাবী ও তাবেঈনগণ একমত হয়েছেন যে, এই সিফাতগুলো স্বীকার করতে হবে এবং এর অর্থ অনুধাবন ও এর বাস্তবতা (রূপক না হওয়া) সাব্যস্ত করার সাথে সাথে এগুলো যেভাবে আছে সেভাবে বিশ্বাস করতে হবে। এতে প্রমাণ হয় যে, এ দুই প্রকারের (সিফাত ও বিধি-বিধানের) মধ্যে এটার (অর্থাৎ সিফাতের আয়াতগুলোর) বর্ণনা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা অধিক উত্তম কাজ এবং এটার বর্ণনা দেওয়ার প্রতি লক্ষ্য রাখাও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সিফাতগুলো শাহাদাতাইন (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এই দুই বাক্যের সাক্ষ্য) বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে পরিপূরক এবং এগুলো সাব্যস্ত করা তাওহীদের ক্ষেত্রে আবশ্যক, তাই আল্লাহ তাআলা ও তার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলো ভালোভাবে বর্ণনা করেছেন যার মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। আর আহকামের (বিধি-বিধান সম্পর্কিত) আয়াতগুলো বিশেষ কিছু লোক বাদে অন্যরা বোঝে না। আর সিফাতের আয়াতগুলো বিশিষ্ট লোকজন (খাস) ও সাধারণ জনতা সকলেই বোঝে। এখানে আমার উদ্দেশ্য (সিফাতগুলোর) মূল অর্থ অনুধাবন করা। প্রকৃত অবস্থা ও ধরন আমাদের উদ্দেশ্য নয়।”

তিনি আরো বলেন, “এটা ফিতরাত, সুস্থ বোধশক্তি ও আসমানী কিতাব থেকে জানা বিষয় যে, যার পরিপূর্ণতার গুণ নেই সে কখনো ইলাহ, বিশ্ব পরিচালনাকারী ও রব হতে পারে না। বরং সে নিন্দিত, ত্রুটিপূর্ণ ও অপরিপূর্ণ। দুনিয়া ও আখিরাতে তাকে প্রশংসা করার মতো কোনো বিষয় নেই। বরং দুনিয়া ও আখিরাতে শুধু তারই প্রশংসা আছে যার আছে পরিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ গুণাবলি। এ কারণেই তিনি প্রশংসার উপযুক্ত। আর একারণেই সুন্নাত, আল্লাহ তাআলার গুণাবলি সাব্যস্তকরণ, সৃষ্টি জগতের উপরে তাঁর অবস্থান, তাঁর কালাম (কথা) ও অন্যের সাথে তাঁর কথা বলা সম্পর্কে সালাফরা যে-সকল বই লিখেছেন সেগুলোকে ‘তাওহীদ’ নামে নামকরণ করেছেন। কারণ এগুলোকে অপনোদন করা, অস্বীকার করা ও অবিশ্বাস করা সৃষ্টিকর্তাকেই অস্বীকার করার নামান্তর। বরং তাওহীদ হলো তাঁর পরিপূর্ণ গুণাবলিকে সাব্যস্ত করা এবং তাঁর সাথে সৃষ্টির সদৃশতা ও ত্রুটি থেকে তাঁকে পবিত্র ঘোষণা করা।”

গ্রন্থ : মা’না লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া মুকতাদাহা ওয়া আসারুহা ফিল ফারদি ওয়াল মুজতামা’, পৃষ্ঠা: ৩৫-৪২

লেখক: শাইখ সালিহ বিন ফাওযান বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান

প্রকাশনী : মদিনা ইউনিভার্সিটি, মদিনা। তৃতীয় সংস্করণ (১৪২২ হিজরী, ২০০২ খৃষ্টাব্দ)

Footnotes
 
  1. সূরা শুরা : ২১
  2. সূরা শুরা : ২১
  3. সূরা আনআম : ২২১
  4. সূরা তাওবাহ : ৩১
  5. তিরমিযী : ৩০৯৫
  6. সূরা নিসা : ৫৯
  7. সূরা শুরা : ১০
  8. সূরা আরাফ : ১৮০

Recommended Readings

Support The Da'wah in Bangladesh

May Allāh Bless You

%d