
u
مكانة هذه الكلمة
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর স্থান
এটা হলো সেই বাক্য যে বাক্যের ঘোষণা মুসলিমরা তাদের আযান, ইকামত, খুতবা ও আলাপ-আলোচনায় দিয়ে থাকে। এটা সেই কালিমাহ (বাক্য) যার উদ্দেশ্যে আসমান-জমিন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও সমস্ত সৃষ্টিজগতের সৃষ্টি হয়েছে। আর এর জন্যই আল্লাহ তা’আলা তাঁর রসূলদেরকে পাঠিয়েছেন, কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন এবং শরীয়াত প্রণয়ন করেছেন। আর এর জন্যই মীযান (দাঁড়িপাল্লা) স্থাপন করা হয়েছে, দিওয়ানের (অর্থাৎ আমলনামার) প্রবর্তন হয়েছে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[1] আর এই বাক্যের জন্যই সৃষ্টিজগৎ (অর্থাৎ মানুষ ও জীন) মু’মিন ও কাফের এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। তাই এই বাক্যটিই হলো সৃষ্টি, আদেশ (বিধান), পুরস্কার ও শাস্তির মূল। আর এটাই সেই হক (সত্য) যার কারণে সৃষ্টিজগতকে অস্তিত্ব দেওয়া হয়েছে। এই বাক্য সম্পর্কে ও এই বাক্যের অধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে ও হিসাব নেয়া হবে। আর এর উপর ভিত্তি করেই পুরস্কার ও শাস্তি দেয়া হবে। আর এর জন্যই কিবলাকে (কাবা) স্থাপন করা হয়েছে, (মুসলিম) জাতির প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং এর জন্যই জিহাদের তরবারিকে কোষমুক্ত করা হয়েছে। এটা সমস্ত বান্দাদের উপর আল্লাহ তা’আলার হক (অধিকার)। এটা হলো ইসলামের বাক্য, দারুস সালামের (জান্নাতের) চাবি এবং এর সম্পর্কেই পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে। ততক্ষণ বান্দার পা নড়বে না যতক্ষণ না তাকে দুটি প্রশ্ন করা হবে : (তোমরা কার ইবাদাত করতে ও তোমরা রাসূলদেরকে কি জবাব দিয়েছো ?)। প্রথমটার জবাব হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহকে জেনে, স্বীকার করে ও সে অনুযায়ী আমল করে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আর দ্বিতীয়টার জবাব হবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে জেনে ও [রাসূল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর] আনুগত্য করে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। এই বাক্যটাই কুফর ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্যকারী (মানদণ্ড)। আর এটা হলো তাকওয়ার (আল্লাহ ভীতির) বাক্য ও (ইসলামের) সুদৃঢ় রজ্জু। আর ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এই বাক্যকে তাঁর উত্তরসূরীদের মাঝে রেখে গেছেন যাতে তারা ফিরে আসে।[2] আল্লাহ তাআলা বলেন:
شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
“আল্লাহ এই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া সত্য কোনো মা’বূদ (উপাস্য) নেই এবং ফেরেশতাগণ ও জ্ঞানীগণও এই সাক্ষ্য দিচ্ছেন। আল্লাহ ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া সত্য কোনো মা’বূদ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[3]
এটা ইখলাসের (একনিষ্ঠতা) বাক্য, সত্যের সাক্ষ্য, সত্যের প্রতি আহ্বান ও শির্ক থেকে মুক্তি। আর এর জন্যই সৃষ্টিজগতের সৃষ্টি হয়েছে। যেমনটা আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
“আমি জীন ও মানবজাতিকে শুধু আমার ইবাদাত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।”[4]
আর এর জন্যই রাসূলদেরকে প্রেরণ করা হয়েছে ও কিতাবসমূহ নাজিল করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
“তোমার পূর্বে যে রাসূলকেই পাঠিয়েছি তাঁর নিকট এই ওহী করেছি যে, আমি ছাড়া সত্য কোনো মা’বুদ নেই অতএব তোমরা আমারই ইবাদাত করো।”[5]
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন:
يُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ بِالرُّوحِ مِنْ أَمْرِهِ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ أَنْ أَنذِرُوا أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاتَّقُونِ
“তিনি তাঁর স্বীয় আদেশে ওহী সহকারে ফেরেশতাদেরকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার কাছে চান তার কাছে অবতরণ করান (এটা বলে) যে, তোমরা সতর্ক করো তিনি ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই । অতএব তোমরা আমাকে ভয় করো।”[6]
ইবনু উইয়াইনাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের উপরে যে সকল নিয়ামত দিয়েছেন তার মধ্যে সর্ববৃহৎ নিয়ামত হলো যে, তিনি তাদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সম্পর্কে অবহিত করেছেন। নিশ্চয়ই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (এর গুরুত্ব) জান্নাতের অধিবাসীদের জন্য তেমন যেমনটা দুনিয়ার অধিবাসীদের জন্য ঠান্ডা পানি (এর গুরুত্ব)। যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে তার জান-মাল নিরাপদ আর যে অস্বীকার করবে তার জান-মাল নিষ্ফল। সহীহ হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন:
আর এটা সেই বাক্য যে বাক্যের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য কাফেরদেরকে সর্বপ্রথম আহ্বান করা হয় যখন তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হয় । কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মুয়াযকে ইয়ামেনে পাঠিয়েছিলেন তাকে বলেছিলেন:
إنك تأتي قوما من أهل الكتاب ، فليكن أول ما تدعوهم إليه شهادة أن لا إله إلا الله
“নিশ্চয়ই তুমি আহলে কিতাবদের একটি জাতির নিকট যাচ্ছো। তাই সর্বপ্রথম তাদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সাক্ষ্য দেওয়ার প্রতি আহ্বান করবে”[9]
হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন। ইতিমধ্যেই তুমি ইসলামে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর মর্যাদা জানতে পারলে এবং জীবনে এর গুরুত্ব জানতে পারলে। আরো জানতে পারলে যে, এটা হলো বান্দাদের উপর প্রথম কর্তব্য (ওয়াজিব) কারণ এটা হলো মূলভিত্তি যার উপরে সকল আমল নির্ভরশীল।
গ্রন্থ : মা’না লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া মুকতাদাহা ওয়া আসারুহা ফিল ফারদি ওয়াল মুজতামা’, পৃষ্ঠা: ১৬-১৯
লেখক: শাইখ সালিহ বিন ফাওযান বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান
প্রকাশনী : মদিনা ইউনিভার্সিটি, মদিনা। তৃতীয় সংস্করণ (১৪২২ হিজরী, ২০০২ খৃষ্টাব্দ)