
u
ভূমিকা
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর কাছে সাহায্য চাই, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি ও তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তন করি। আমরা আমাদের নিজেদের অকল্যাণ ও আমাদের আমলের অকল্যাণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ হেদায়েত দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের উপযুক্ত সত্য কোনো মাবুদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। তাঁর উপরে, তাঁর পরিবার বর্গের উপরে, তাঁর সাহাবীদের উপরে, কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর সকল অনুসারীদের উপরে ও তাঁর সুন্নাতকে যাঁরা আঁকড়ে ধরবে তাঁদের উপরে সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক। অতঃপর:
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে তাঁর স্মরণ করার জন্য আদেশ করেছেন, তাঁর যিকিরকারীদের (স্মরণকারীদের) প্রশংসা করেছেন এবং তিনি তাদের জন্য বড় প্রতিদানের ওয়াদা করেছেন। তাই তিনি তাদেরকে সাধারণভাবে সব সময়ই তাঁর যিকিরের (স্মরণ করার) আদেশ করেছেন। (আর বিশেষভাবে) বিভিন্ন ইবাদত শেষে তাঁর স্মরণ করার আদেশ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلاةَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قِيَاماً وَقُعُوداً وَعَلَى جُنُوبِكُمْ
“অতঃপর তোমাদের যখন সালাত আদায় করা হয়ে যাবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করবে।”[1]
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন:
إِذَا قَضَيْتُمْ مَنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَذِكْرِكُمْ آبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْراً
“যখন তোমরা তোমাদের হজের অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করে ফেলবে তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণ করবে যেমনটা তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাদের স্মরণ করে থাকো অথবা এর থেকেও গভীরভাবে তাঁকে স্মরণ করবে।”[2]
আর বিশেষভাবে আল্লাহ হজের অনুষ্ঠানাদির মধ্যে তাঁর স্মরণ করতে বলেছেন। আল্লাহ তা’আলা এজন্য বলেন:
فَإِذَا أَفَضْتُمْ مِنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللَّهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ
“যখন তোমরা আরাফাত থেকে ফিরবে তখন মাশআরে হারামের নিকট আল্লাহর স্মরণ করবে।”[3]
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন:
وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الأَنْعَامِ
“এবং তিনি তাদেরকে যেসকল চতুষ্পদ জন্তু হতে রিযক দিয়েছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম পাঠ করতে পারে।”[4]
আল্লাহ তা’আলা তাঁর স্মরণের জন্যই সালাত কায়েম করার বিধান দিয়েছেন। তাই তিনি বলেন:
وَأَقِمِ الصَّلاةَ لِذِكْرِي
“আর আমার স্মরণে সালাত কায়েম করো।”[5]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
أَيَّام التَّشْرِيق أكل وَشرب وَذكر الله
“তাশরিকের দিনগুলো হলো খাওয়া, পান করা ও আল্লাহকে স্মরণ করার দিন।”[6]
আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْراً كَثِيراً وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلاً
“হে ইমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো।”[7]
আর সবচেয়ে উত্তম যিকির (আল্লাহর স্মরণ) হলো
لَا إِلٰهَ إِلَّا الله
(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের উপযুক্ত সত্য কোন মাবুদ নেই।)
যেমনটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন:
خير الدُّعَاء دُعَاء عَرَفَة وَخير مَا قلت أَنا والنبيون من قبلي لَا إِلَه إِلَّا الله وَحده لَا شريك لَهُ، لَهُ الْملك لَهُ الْحَمد وَهُوَ على كل شَيْء قدير
“সর্বোত্তম দোআ হলো আরাফাতের (দিনের) দোআ এবং আমি ও পূর্ববর্তী নবীগণ যা কিছু বলেছেন তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো:
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٌ
(অর্থ :আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের উপযুক্ত সত্য কোনো মাবুদ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই, সমস্ত রাজত্ব ও প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁর এবং তিনি সকল বিষয়ের উপরে ক্ষমতাবান)।’’[8]
আর যেহেতু এই মহান বাক্য “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর অন্যান্য যিকিরের মধ্যে এতো উঁচু মর্যাদা রয়েছে; এর সাথে অনেক বিধান জড়িত এবং এর শর্ত, অর্থ ও দাবি রয়েছে তাই এই বাক্য শুধু মুখ দিয়ে বলার বিষয় নয়। যেহেতু ব্যাপারটি এমনই তাই আমি এই বিষয়টিকে আমার বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু হিসেবে প্রাধান্য দিয়েছি। আল্লাহর তা’আলা নিকট এই আশা নিয়েই (এই বিষয়বস্তু নিয়ে লিখেছি) যেন তিনি আমাদের ও তোমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করবেন যারা এই বাক্যকে আঁকড়ে ধরে থাকে, এর অর্থ জানে এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে এর দাবি অনুযায়ী আমল করে। এই বাক্যের উপর আমার আলোচনা নিম্নোক্ত পয়েন্ট অনুযায়ী হবে :-
জীবনে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর মর্যাদা, এর ই’রব (ব্যাকরণগত বিশ্লেষণ), এর ভিত্তিসমূহ, শর্তসমূহ, অর্থ ও এর দাবি এবং কখন (কিভাবে) এই বাক্য উচ্চারণ করলে মানুষের জন্য তা উপকারে আসবে আর কখন তা কোনো উপকারে আসবে না। অতঃপর আমি আল্লাহ তা’আলার সাহায্যপ্রার্থী হয়ে বলছি :-
গ্রন্থ : মা’না লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া মুকতাদাহা ওয়া আসারুহা ফিল ফারদি ওয়াল মুজতামা, পৃষ্ঠা: ১২-১৫
লেখক: শাইখ সালিহ বিন ফাওযান বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান
প্রকাশনী : মদিনা ইউনিভার্সিটি, মদিনা। তৃতীয় প্রকাশ (১৪২২ হিজরী, ২০০২ খৃষ্টাব্দ)