
u
ওযু এবং তার পদ্ধতি সম্পর্কে তুমি যা জিজ্ঞেস করেছো তার উত্তর :
প্রথমত : ওযু সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত; যা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
“হে মুমিনগণ, তোমরা যখন সালাতের জন্য দাঁড়াবে তখন মুখমন্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নিবে, মাথা মাসাহ করবে ও তোমাদের পাগুলো টাখনু পর্যন্ত ধুবে।”[1]
এভাবেই আল্লাহ তাআলা সূরা মায়িদায় মুমিনদেরকে আদেশ করেছেন। রাসূল ﷺ বলেছেন:
لا تقبل صلاة بغير طهور
“ওযু ছাড়া কোনো সালাত কবুল হয় না।”[2]
রাসূল ﷺ আরো বলেছেন
لا تقبل صلاة أحدكم إذا أحدث حتى يتوضأ
“তোমাদের কারও ওযু নষ্ট হলে সে যতক্ষণ না পুনরায় ওযু করে ততক্ষণ তার সালাত কবুল হয় না।”[3]
তাই অবশ্যই ওযু করতে হবে। ওযুর (আগে মল-মূত্রের অপবিত্রতা থেকে) পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা (প্রস্রাব বা পায়খানার পরে পবিত্র হওয়ার জন্য গোপনাঙ্গ পানি দিয়ে পরিষ্কার) করবে যদি সে মল বা মূত্র ত্যাগ করে থাকে। অথবা সে ইস্তিজমার (অর্থাৎ) ইট-পাথর বা অমসৃণ পবিত্র টিসু পেপার দিয়ে তার থেকে নির্গত অপবিত্রতা তিনবার বা তারও অধিক পরিষ্কার করবে যতক্ষণ না (প্রস্রাব বা পায়খানা বের হওয়ার) জায়গা পরিষ্কার হচ্ছে। পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই মল ও মূত্র বের হবার স্থান পরিষ্কার করতে হবে যতক্ষণ না মল-মূত্রের সকল চিহ্ন দূর হচ্ছে। পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা উত্তম। আর সে যদি উভয়টাই একত্রে করে (অর্থাৎ) ইসতিজমার (ইট-পাথর বা টিসু পেপার ব্যবহার) করে সাথে পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জাও করে নেয় তবে তা অধিক পরিপূর্ণ হবে।
অতঃপর, বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করবে আর এটা বলার নিয়ম ওযুর শুরুতেই। কিছু সংখ্যক আলিম ওযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলাকে ওয়াজিব বলেছেন। তারপর উত্তম (মুস্তাহাব) হলো দুই হাত (কব্জি পর্যন্ত) ধুয়ে ফেলা। অতঃপর, তিন অঞ্জলী পানি দিয়ে তিনবার কুলি করবে ও নাকে পানি নিবে। এরপর (কপালের) উপরের দিকে চুল গজানোর স্থান থেকে শুরু করে, নিচে থুতনি পর্যন্ত ও (মুখমন্ডলের দুই) পাশে কান পর্যন্ত তিনবার ধুয়ে ফেলবে। এভাবেই মুখমন্ডল ধুতে হবে। তারপর আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে শুরু করে কনুই অর্থাৎ বাহু ও হাতের সংযোগস্থল পর্যন্ত হাত ধুয়ে ফেলবে। আর কনুইও ধুতে হবে। পুরুষ-নারী সকলেই প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত ধুবে। তারপর পুরুষ হোক বা নারী হোক সকলেই মাথা ও দুই কান মাসাহ করবে। এরপর (প্রথমে) তার ডান পা ও পরে বাম পা টাখনুসহ ধুতে হবে, যে পর্যন্ত না পায়ের নলায় (ভাল মতো) পানি পৌছায়। এতে করে টাখনু ধোয়া হয়ে যাবে।
কুলি করা, নাকে পানি নেওয়া, মুখমন্ডল, হাত ও পা ধোয়ার ক্ষেত্রে সুন্নাত হচ্ছে তা তিনবার করে ধুতে হবে। তবে মাথার ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো: তা কানসহ মাত্র একবারই মাসাহ করতে হবে। যদি সে তার মুখমন্ডল পরিপূর্ণভাবে পানি লাগিয়ে একবার ধুয়ে ফেলে, তারপরে দুই হাত পানি দিয়ে পরিপূর্ণভাবে একবার করে ধুয়ে ফেলে, এরপর (মাথা মাসাহ করার পরে) তার দুই পা ভালো করে একবার বা দুইবার করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে তবে এটাই যথেষ্ট হবে। কিন্তু সর্বোত্তম হলো তিনবার করে ধোয়া। আর নবী ﷺ থেকে প্রমাণিত যে, তিনি একবার, দুবার ও তিনবার করেও ওযু করেছেন (অর্থাৎ মাথা ও কান বাদে, এক ও একের অধিক, দুই থেকে তিন বারও ওযুর অঙ্গগুলো ধুয়েছেন)। আর তাঁর থেকে আরো প্রমাণিত যে, তিনি ওযুর কিছু অঙ্গ তিনবার করে ধুয়েছেন ও কিছু অঙ্গ দুবার করে ধুয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ, এই বিষয়ে প্রশস্ততা আছে।
আর ওয়াজিব হলো (ওযুর) প্রত্যেকটি অঙ্গ একবার করে পানি দিয়ে পরিপূর্ণভাবে ধোয়া। কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়ার পরপর পানি দিয়ে পরিপূর্ণভাবে মুখমন্ডল ধুতে হবে। তারপরে ডানহাত কনুইসহ পানি দিয়ে পরিপূর্ণভাবে ধুবে আর এভাবে তার বাম হাত ও পরিপূর্ণভাবে ধুবে। এমনি করে পরিপূর্ণভাবে মাথা ও কান মাসাহ করবে। তারপরে দুই পা টাখনুসহ, ভালো করে সব জায়গায় পানি লাগিয়ে একবার ধুবে। এগুলো হলো ওয়াজিব। যদি সে দুবার করে ধোয় তাহলে তা উত্তম। আর যদি সে তিনবার করে ধোয় এটাও উত্তম। আর এভাবেই ওযু শেষ হবে।
অতঃপর বলবে
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ الْتَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
এভাবেই নবী ﷺ আমাদেরকে শিখিয়েছেন। তাঁর থেকে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন পরিপূর্ণভাবে ওযু করবে অতঃপর বলবে:
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের উপযুক্ত সত্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল।”
হাদিসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন। এরপর তিরমিযী হাসান সনদে অতিরিক্ত অংশ বর্ণনা করেছেন:
اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ الْتَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
“হে আল্লাহ তুমি আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করো।”[5]
এটা ওযুর পরে বলতে হবে। পুরুষ ও মহিলা সকলেই এই বাক্য গোসলখানার বাহিরে বলবে।
এর মধ্যেই তুমি ওযু করার শরীয়ত সম্মত নিয়ম জেনে গেলে। নবী ﷺ এর এই বাণী অনুযায়ী ওযু হলো সালাতের চাবি: (তিনি বলেন:)
مفتاح الصلاة الطهور، وتحريمها التكبيروتحليلها التسليم
“সালাতের চাবি হলো পবিত্রতা। তার তাহরীম হচ্ছে তাকবীর”
(অর্থাৎ সালাতের শুরুতে আল্লাহু আকবার বললে সালাতের বাহিরের কাজ হারাম হয়ে যায়) ও তার তাহলীল হচ্ছে সালাম (অর্থাৎ সালাম ফিরানোর মাধ্যমে সালাতের বাহিরের কাজ আবারও হালাল হয়ে যায়)[6]
Footnotes
- সূরা মায়িদাহ : ৬
- সহীহ মুসলিম : ৪২৩
- সহীহ মুসলিম : ৪২৫
- ইমাম আহমাদ মুসনাদুশ শামিয়্যিন এ (১৬৬৭৬) নম্বর হাদিস , হাদিসটি মুসনাদ আহমাদের শব্দে বর্ণিত। ইমাম মুসলিম কিতাবুত তাহারাতে (৩৪৫) নম্বর হাদিসে বর্ণনা করেছেন।
- তিরমিযি; কিতাবুত তাহারাতে (৫০) নম্বর হাদিসে বর্ণনা করেছেন।
- ইমাম আহমাদ ‘মুসনাদ আশারা আল-মুবাশ্বিরীন বিল জান্নাহ’ -এ (৯৫৭) নম্বর হাদিসে বর্ণনা করেছেন। তিরিমিযি ‘কিতাবুত তাহারায়’ (০৩) নম্বর হাদিসে বর্ণনা করেছেন। ইবনু মাজাহ ‘আত-তাহারাহ ওয়া সুনানুহা’ কিতাবে (২৭১) নম্বর হাদিসে বর্ণনা করেছেন।