
u
শিক্ষার্থী: “আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।”
ইমাম: “এবং আপনার প্রতিও শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।”
শিক্ষার্থী: “ইসলাম কি? এবং একজন মুসলিম কে?”
ইমাম: “ইসলাম হলো আল্লাহর সমস্ত নবীগণের প্রতি প্রেরিত ধর্ম। ইসলাম হলো কোনো কিছুকে অংশীদার করা ব্যতীত একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করা এবং এর মাধ্যমে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করা, তাঁর বিধিনিষেধ মেনে চলা ও সকল প্রকার পৌত্তলিকতা হতে দূরে থাকা। একজন মুসলিম হচ্ছেন তিনি যিনি ইসলাম ধর্মকে অনুসরণ করেন।”
শিক্ষার্থী: “ইসলাম ধর্মের মূল উৎসগুলো কি?”
ইমাম: “ইসলামের উৎস হলো দুটি: ১) আল-কুরআন: যেই ধর্মগ্রন্থ নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল। সমস্ত মুসলিম একে আল্লাহর প্রকৃত কথ্য বাণী বলে বিশ্বাস করেন যা তিনি তাঁর মনোনীত নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি ওয়াহী করার মাধ্যমে মানবজাতিকে অবগত করেছেন। ২) সুন্নাহ: আর তা হলো নবীর হাদীস বা পথ। এটা নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কথা, কাজ, মৌন সম্মতি, তাঁর বাহ্যিক বিবরণ এবং চরিত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে যেগুলো তাঁর সাহাবীগণ দেখেছিলেন, এবং পরবর্তীতে যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লিখিত ও মৌখিক আকারে ধারাবাহিকভাবে চলে এসেছে। ঐতিহাসিক এই বিষয়টিকে প্রায়শই হাদীস হিসাবে উল্লেখ করা হয়। মুসলিমরা কোনও ভাবেই নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপাসনা করেন না।”
শিক্ষার্থী: “আল্লাহ কে?”
ইমাম: “আল্লাহ হচ্ছেন সর্বশক্তিমান ইলাহ। এটা একটি আরবী শব্দ যার অর্থ হলো: সেই একমাত্র ইলাহ যিনি সত্যিকার অর্থে উপাস্য হওয়ার যোগ্য।”
শিক্ষার্থী: “ইসলামের নবী কারা?”
ইমাম: “ইসলামের নবীগণ এবং যাদেরকে আমরা ‘আহলুল কিতাব’ বলে থাকি তথা ইহুদী ও খ্রিস্টানদের নবীরা এক ও অভিন্ন। তবে মুসলিমরা একজন সর্বশেষ নবীর উপরও বিশ্বাস করেন যিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যার নাম মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। সুতরাং মুসলিমরা নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা এবং মুহাম্মাদ (আলাইহিমুস সালাম) এর মতো আল্লাহর সকল নবীর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেন। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে, তারা সকলেই একমাত্র আল্লাহর উপাসনা, তাঁর আনুগত্য, সৎ আমল সম্পাদন ও সকল প্রকার পৌত্তলিকতা বর্জনের নির্দেশ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই মানবজাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। সুতরাং এই তিনটি ধর্মের মাঝে একটি যৌথ ইতিহাস রয়েছে কারণ এই ধর্মগুলো একই নবীদের মধ্য থেকে অনেকের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে ও সেই সাথে নাযিলকৃত ধর্ম গ্রন্থগুলোর উপরও বিশ্বাস স্থাপন করে।”
শিক্ষার্থী: “একজন মুসলিম কিভাবে অমুসলিমদের সাথে আচরণ করবে?”
ইমাম: “আল্লাহ ও তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন মানুষের সাথে সদয় এবং সর্বোত্তম আচরণ করেন। মহান আল্লাহ বলেছেন: “যারা ধর্মের কারণে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের সাথে ন্যায় ও সদয় আচরণ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন যারা ন্যায়পরায়ণ।” (কুরআন ৬০:৮) নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর একজন সাহাবী ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন: “একজন ইহুদী, খ্রিস্টান বা একজন অগ্নিপূজকের সালামের জবাব দাও কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন: “এবং যখন তোমাকে সালাম জানানো হয়, প্রতি উত্তরে তার চেয়ে উত্তম বা অন্ততপক্ষে তার অনুরূপ সালাম প্রদান করো।” অন্য একজন সাহাবী, ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কাফেরদের দিকে হাত নেড়ে অভিবাদন জানাতেন। (সূত্র: বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ)। মুসলিমদেরকে অবশ্যই সত্যবাদী, সৎ, যত্নশীল, দানশীল হতে হবে এবং মুসলিম ও অমুসলিম উভয়ের সহিত প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করতে হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর একজন সাহাবী, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) একটি ছাগল রান্না করলেন এবং তার চাকরকে বললেন: “আপনি কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীর কাছে এখনও কিছু পাঠিয়েছেন? কেননা আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: ‘ফেরেশতা জিব্রাঈল আমাকে প্রতিবেশীর বিষয়ে এতটাই উপদেশ দিতেন যে আমার মনে হচ্ছিল সে আমার সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে!'” (সূত্র: বুখারী) যখন নবী এবং তাঁর সাহাবীগণ মক্কায় পৌত্তলিকদের দ্বারা নির্যাতিত ও নির্মম আচরণের শিকার হচ্ছিলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন খ্রিস্টান আবিসিনীয় রাজার কথা উল্লেখ করলেন যার সম্পর্কে তিনি বললেন: “যদি তুমি দেশ ত্যাগ করে আবিসিনিয়ায় চলে যেতে (তবে কতই না ভালো হতো), কেননা সেখানে একজন রাজা আছেন যিনি কাউকে অত্যাচার করেন না।” (সূত্র: ইবনু হিশাম কর্তৃক নবীর সীরাহ)। তাই মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে এই ধরনের শান্তিপূর্ণ মিথষ্ক্রিয়া (পারস্পরিক সৌজন্যসূচক আচার ব্যবহার) মানুষকে আল্লাহ, ইসলাম, নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবায়ে কিরামের সম্পর্কে ভাল ধারণা পোষণ করার পাশাপাশি দ্বীন ইসলামকে আরও বিশদভাবে জানার প্রতি অনুপ্রাণিত করে। বরেণ্য মুসলিম আলিম ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: “দেখুন! কত মানুষ আছেন যারা প্রথমে শুধুমাত্র মুসলিমদের উত্তম আচার-আচরণ, তাদের সত্যবাদিতা ও তাদের লেনদেনে সততার কারণে ইসলামে প্রবেশ করেছেন।”
শিক্ষার্থী: “আজকাল প্রায়ই আমরা ইসলাম এবং জঙ্গিবাদকে একসাথে উল্লেখ হতে দেখি। সেক্ষেত্রে ইসলাম জঙ্গিবাদ সম্পর্কে কি বলে?”
ইমাম: “ইসলাম সব ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে নিষিদ্ধ করেছে। তবে কিছু চরমপন্থী দল আছে, যারা ইসলামের নামে, মুসলিম ও অমুসলিম উভয়কেই সমানভাবে আতঙ্কিত করে। এই জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত হলো সিরিয়া ও ইরাকের আল-কায়েদা এবং ISIS। এই সন্ত্রাসী দলগুলোকে ইসলামী পরিভাষায় খাওয়ারিজ বলা হয়। এই শব্দটি ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদেরকে বুঝায়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের আবির্ভাব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং মুসলিমদেরকে তাদের থেকে দূরে থাকতে বলেছেন এবং তাদের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা সর্বপ্রথম, চতুর্থ খলীফা আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর সময়ে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কিছু উৎকৃষ্ট সাহাবীদের হত্যা করেছিল।”
শিক্ষার্থী: “তাহলে এই জঙ্গি খাওয়ারিজরা সমস্ত মানব সমাজকে এতটা মূল্যহীন হিসেবে কেন দেখে যে, তারা মনে করে কাউকে করুণা ও সহানুভূতি ছাড়াই হত্যা করা যায়?”
ইমাম: “কারণ তারা বিশ্বাস করে যে তারাই একমাত্র আল্লাহর প্রতি সত্যিকারের বিশ্বাস পোষণকারী এবং তারা ব্যতীত বাকি সবাই অবিশ্বাসী বা ধর্মত্যাগী যাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। তারা নিজেদেরকে আল্লাহর মনোনীত গোষ্ঠী হিসেবে দেখে সুতরাং তারা বিশ্বাস করে “আল্লাহর সমস্ত শত্রুদের” শাস্তি দিতে হবে, মুসলিম ও অমুসলিমদের গণহত্যার মাধ্যমে পৃথিবীকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। সে কারণেই তারা রাস্তায় চলতে চলতে নিমিষেই, পুনর্বিবেচনা বা কোনো সহানুভূতি ছাড়াই দৃশ্যমান প্রতিটি পুরুষ, মহিলা ও শিশুর উপর গুলি চালাতে পারে। তাদের একজন নেতা প্রকাশ্যে দাবি করেছিল: “আজ সমগ্র বিশ্ব অবিশ্বাসীদের ভূমি, এমনকি মক্কা ও মদীনাও।” এই খাওয়ারিজরা হলো নির্দয় খুনি যাদের কোনো সহানুভূতি নেই, তারা কারও প্রাণের তোয়াক্কা না কোরেই নিরীহ, নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে। তারা আল্লাহর আইন দ্বারা বিচার করে না; অথচ তারা নিজেরা নিজেদের জন্য একটি আইন তৈরি করে নিয়েছে এবং তারা যা কিছু উদ্ভাবন করেছে তা ছাড়া তাদের আর কোনও ধর্ম নেই। তারা নির্বিচারে মুসলিম ও অমুসলিমদেরকে হত্যা করে। তারা মুসলিমদেরকে জীবন্ত খাঁচায় পুড়িয়ে ফেলে, তারপর নিজেদের জন্য আল্লাহভীরুতা দাবি করে! এবং ISIS -এর কর্মকাণ্ড থেকে আপনি নিজেও এটা শুনেছেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আগুনের প্রতিপালক ব্যতীত কেউ আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে পারে না।” (সূত্র: আবূ দাঊদ) খাওয়ারিজরা এমন এক সম্প্রদায় যাদের কোনও দয়া নেই, তাই তাদের প্রতি দয়া করা হবে না, যেমনটি নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যে মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করবেন না।” (সূত্র: মুসলিম)”
শিক্ষার্থী: “উগ্রবাদীকরণের লক্ষণগুলো কী যেগুলো অন্যদের মাঝে দেখে আমি নির্ণয় করতে পারব, সেগুলো এড়াতে পারব এবং তাদের পরামর্শ দিতে পারব?”
ইমাম: “কিছু লক্ষণ এবং সংকেত রয়েছে যেগুলো আপনি তার মধ্যে দেখতে পারবেন যে অন্যদের উগ্রবাদী বানানোর চেষ্টা করছে। একজন চরমপন্থীর কয়েকটি সুস্পষ্ট লক্ষণের তালিকা আমি তুলে ধরছি: ১) সে ক্রমাগত মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর শাসনব্যবস্থা ও তাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর জোর দিবে এবং এটাকে তার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করবে। মনে হবে যেন ইসলামে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২) সে মুসলিম শাসকদেরকে অবিশ্বাসী ও ধর্মত্যাগী বলে গালি দিবে; অতঃপর “হুকুম কেবলমাত্র আল্লাহর” পতাকাতলে মুসলিম দেশগুলোতে সংঘটিত সহিংস বিদ্রোহগুলোকে ন্যায্যতা দিবে। এই বাক্যটি (“হুকুম কেবলমাত্র আল্লাহর”) অপব্যাখ্যাকৃত ও চরমপন্থীদের দ্বারা অপপ্রয়োগকৃত ৩) সাইয়্যেদ কুতুব (মৃ.১৯৬৬)-এর মতো চরমপন্থী মতাদর্শের নেতাদের সে প্রশংসা করবে। বিন লাদেন থেকে আনওয়ার আল-আওলাকী পর্যন্ত পুরো বিশ্বের চরমপন্থীরা কুতুবকে সম্মান করে। সে মিশরীয় গোষ্ঠী “মুসলিম ব্রাদারহুড” এর একজন বিশিষ্ট নেতা ছিল। তার লেখাগুলো (লেখা বইগুলো) ইংরেজিসহ কয়েক ডজন ভাষায় বিস্তৃত ও অনূদিত হয়েছে। মার্কিন বংশোদ্ভূত ইয়েমেনী সন্ত্রাসী আনওয়ার আল-আওলাকী একবার গর্ব করে বলেছিল যে, সে সাইয়্যেদ কুতুবের লেখায় এতটাই নিমগ্ন ছিল যে কারাগারে থাকাকালীন সে কুতুবের উপস্থিতিকে অনুভব করছিল! ৪) সে ঐ সমস্ত মুসলিমদেরকে অবিশ্বাসী বলে ঘোষণা দিবে যারা তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করে। ৫) প্রায়শই সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতামূলক কাজকে সে সাধুবাদ দিবে হোক সেগুলো আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ, জিম্মিদের শিরচ্ছেদ, অমুসলিমদের হত্যা, অপহরণ ইত্যাদি। আপনি তার কাছ থেকে সহিংস চরমপন্থার নিন্দা শুনতে পাবেন না।”
শিক্ষার্থী: “আমি যদি হিজাব পরিধান করা মুসলিম নারীদের বা দাড়িওয়ালা পুরুষদের দেখি যারা নামাজ পড়ে, তাহলে কি আমার চিন্তিত হওয়া উচিত? তারা কি চেষ্টা করবে আমাকে নিয়োগ দিতে?”
ইমাম: “মোটেই না। কারণ শালীন পোশাক পরিধান করা, এবং দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা, দান সাদাকাহ করা, রমাদানের রোযা রাখা এবং সৎকর্ম করার জন্য মুসলিমরা আদিষ্ট। তাই আপনি যখন দেখবেন মুসলিম নারীরা হিজাব পরিধান করছেন, মুসলিম পুরুষেরা লম্বা জুব্বা পরিধান করছেন ও বড় দাড়ি রাখছেন তখন এগুলোকে চরমপন্থার লক্ষণ হিসেবে দেখবেন না। আপনি কখনই চিরাচরিত ইসলামকে চরমপন্থার সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। বহু সুশিক্ষিত ইসলাম ধর্মের অনুশীলনকারী মুসলিম জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবচাইতে বেশি সোচ্চার। হালাল গোশত খাওয়া, পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া, দাড়ি রাখা এবং হিজাব পরা উগ্রবাদীতার লক্ষণ নয়! তবে মুসলিম কিশোর-কিশোরী, ছেলে এবং মেয়ে উভয়কে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে চরমপন্থীরা যে পদ্ধতি ব্যবহার করে সে সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমি নিশ্চিত আপনি এমন ঘটনা শুনেছেন যেখানে কিশোররা তাদের পরিবারকে রেখে ISIS এ যোগ দিতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে উগ্রপন্থীরা তাদেরকে প্রস্তুত করেছিল ও তাদের সত্যিকারের উদ্দেশ্য এবং তাদের উগ্রবাদী বিশ্বাসকে আড়াল করতে তারা তাদেরকে রাজি করিয়েছিল; যার ফলে তাদের পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন ও শিক্ষকদের সাথে মিথ্যা বলে অবশেষে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এটা ইসলামে হারাম (নিষিদ্ধ) কারণ এটা প্রতারণার সাথে জড়িত, এবং তা প্রিয়জনদের অন্তরকে ব্যথিত করে – এবং একটি জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করা নিঃসন্দেহে ইসলাম বিরোধী একটি কাজ। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষজনকে তাদের বাবা-মাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় রেখে যেতে দিতেন না। আপনি ISIS এর ভিডিও এবং বক্তৃতা দ্বারা প্রতারিত হবেন না কারণ তারা সত্যের খুব দক্ষ বিকৃতকারী যারা ইসলামকে অপব্যাখ্যা কোরে সহজেই মানুষকে ফুসলাতে পারে। এই কারণেই অনেক যুবক যারা তাদের প্রতারণার জালে পড়েছে এবং তাদের বাড়িঘর ছেড়েছে তারা পরিশেষে অনুশোচনায় পড়ে যায় এবং তারা এখন হাজার হাজার মাইল দূরে এমন এক যুদ্ধক্ষেত্রে আটকে আছে যেখানে লোকেরা একে অপরকে প্রতিদিন হত্যা করছে।”
শিক্ষার্থী: “আমি কি করতে পারি যদি আমি জানি কেউ আমাকে ISIS বা অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে চাইছে, এমনকি একটি জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছে?”
ইমাম: “আপনি অবশ্যই এমন কাউকে বলবেন যাকে আপনি বিশ্বাস করেন; একজন অভিভাবক বা একজন শিক্ষক বা পুলিশকে বলুন। সন্ত্রাস দমন করা একটি ধর্মীয় কর্তব্য। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “এমন কোনো জাতি যাদের মধ্যে পাপ সংঘটিত হয় এবং তারা ঐ পাপীদের চেয়ে শক্তিশালী হওয়া সত্বেও তাদেরকে বাধা দেয় না, তবে আল্লাহ তাদের সবাইকে সমূলে শাস্তি দিবেন।” সুতরাং আপনি যখন জানবেন যে কেউ অপরাধ করতে চলেছে, তখন আপনি কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে তা ঘটতে দিতে পারেন না। অপরাধমূলক কাজ রুখে দাড়ানোর ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর নবী আমাদেরকে সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছেন।”
শিক্ষার্থী: “জিহাদের বিষয়ে ইসলাম কি বলে?”
ইমাম: “ইসলামে জিহাদ হলো বিভিন্ন প্রকারের। এর অর্থ হলো আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা; যা আল্লাহর আনুগত্য করার নিমিত্তে নিজের প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাধ্যমে শুরু হয়; তা হতে পারে সঠিক উৎস থেকে সঠিকভাবে ইসলামকে শেখার মাধ্যমে; তা হতে পারে আপনি যা শিখেছেন তা অনুশীলন করার মাধ্যমে; এবং ধৈর্য সহকারে তা অন্যদেরকে শেখানোর মাধ্যমে, যদিও কিনা আপনাকে ঐ পথে বহু কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। এটাই হচ্ছে প্রকৃত জিহাদ যেমনটা মধ্যযুগের প্রখ্যাত আলিম ইবনুল কাইয়্যিম (মৃ.৭৫২ হি) বলেছেন। আর জিহাদের আরেকটি প্রকার হলো যুদ্ধের শিষ্টাচার-সম্পন্ন, বৈধ যুদ্ধক্ষেত্রের সংগ্রাম। বৈধভাবে যুদ্ধ ঘোষণার একটি উদাহরণ হলো প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ যা ১৯৯০-৯১ সালে সাদ্দাম হুসাইনের নেতৃত্বে ইরাকী সেনাবাহিনী দ্বারা কুয়েত আক্রমণ করার পরে সংগঠিত হয়। তখন সৌদি আরব অন্যান্য দেশের সাথে জোট বেঁধে (জোটের) নিয়োগকৃত সেনাবাহিনী ব্যবহার করে তার সীমান্তকে রক্ষা করেছিল। জিহাদের ব্যাপারে মুসলিম উলামাদের ঐক্যমত্য আছে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও নির্দেশিকা নিম্নে প্রদান করা হলো: ক) যুদ্ধ ঘোষণা দিবেন এমন নেতৃবৃন্দ যাদের বৈধ সরকার রয়েছে; পৃথক কোনো নাগরিক, সন্ত্রাসী, বিদ্রোহী বা প্রচারক তা ঘোষণা দিবেন না বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা ঘোষণা দেয়া যাবে না! খ) এই যুদ্ধ অবশ্যই একটি ন্যায়সঙ্গত কারণে, আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর ইবাদতের উদ্দেশ্যে হতে হবে। গ) সংঘর্ষ ও যুদ্ধকালীন অবস্থায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা বা ক্ষতি করা যাবে না। নিম্নোক্ত বেসামরিক নাগরিকদের সমস্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে যেমন: নারী, শিশু, সন্ন্যাসী, দূত, শিক্ষক, নার্স, ডাক্তার, সাহায্য কর্মীসহ আরও অনেকের। অথচ জঙ্গিবাদীরা দাবি করে যে সমস্ত অমুসলিম [এবং তাদের সাথে যারা একমত নয় এমন মুসলিমরাও] তাদের বৈধ লক্ষ্যবস্তু যা ইসলামী শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক। ঘ) ব্যক্তিগত লাভ, জাতীয়তা, সম্পদ লুণ্ঠন, রাজনৈতিক দলাদলি, ধর্ষণ, লুটপাট, সুনাম, খ্যাতি বা দুঃসাহসিকতা প্রদর্শনের নামে লড়াই করা নিষিদ্ধ। জঙ্গিবাদীরা যে কোনো পরিস্থিতিতে জিহাদকে বৈধতা দিয়ে শব্দটির অর্থকে পাল্টে দিয়েছে। তারা একটি বৈধ শাসন ব্যবস্থা ছাড়াই যুদ্ধ করে, তারা সেই সমস্ত মুসলিম ও অমুসলিমদেরকে সমানভাবে হত্যা করে যাদেরকে হত্যা করা বৈধ নয়; তারা বেসামরিক এলাকায় বোমা স্থাপন করে; তারা আত্মঘাতী বোমা হামলায় আত্মহত্যা করে, যা নিষিদ্ধ। তারা তাদেরকে হত্যা করে, যাদেরকে শাসকেরা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে মুসলিম দেশগুলোতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কাজেই তারা যেটাতে অংশগ্রহণ করে তা কোনো অর্থেই জিহাদ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”
শিক্ষার্থী: “আপনার সময়ের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ইমাম এবং আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।”
ইমাম: “কথা বলে আমারও ভালো লাগলো – এবং আপনার প্রতিও আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও তাঁর রহমত বর্ষিত হোক।”