
u
معنى هذه الكلمة ومقتضاها
এই কালিমার অর্থ ও দাবি
পূর্বে যা বর্ণিত হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ হলো : একজন ইলাহ বাদে কোনো ইলাহ সত্য ইলাহ নয়। আর তিনি হলেন এক আল্লাহ যার কোনো শরীক নেই। এই কালিমায় আছে যে, আল্লাহ ব্যতীত যে-সকল মাবুদ (উপাস্য) আছে তারা সত্য ইলাহ নয়; বরং তারা মিথ্যা ইলাহ। এ কারণেই (কুরআন-হাদীসে) যখন আল্লাহর ইবাদাতের কথা আসে তখন আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল কিছুর ইবাদাতকে অস্বীকার করার বিষয়টাও একসাথে আসে। কারণ আল্লাহর সাথে শিরক করা অবস্থায় ইবাদাত বিশুদ্ধ হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا
“এবং তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক কোরো না।’’[1]
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন:
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لاَ انْفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيم
“অতএব, যে তাগুতকে অস্বীকার করল ও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল সে মজবুত রজ্জু ধারণ করল যা ছিন্ন হবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’’[2]
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন:
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
“আর আমরা প্রত্যেক জাতির নিকট এই নির্দেশ দিয়ে রাসূল পাঠিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো।’’[3]
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
من قال لا إله إلا الله وكفر بما يعبد من دون الله حرم ماله ودمه
“যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলল এবং আল্লাহ ব্যতীত যে সকল কিছুর ইবাদাত করা হয় তা অস্বীকার করল তার জানমাল নিরাপদ।’’[4]
আর প্রত্যেক রাসূলই তার জাতিকে বলতেন:
اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
“তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই।’’[5]
এরকম আরো অনেক দলীল আছে।
ইমাম ইবনু রজব (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন : এই কালিমার বাস্তবায়ন ও ব্যাখ্যা হলো : যে বান্দা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে তার এই বাক্য বলা দ্বারা বোঝা যায় যে, আল্লাহ ছাড়া তার কোনো ইলাহ নেই। ইলাহ হলেন তিনি যার আনুগত্য করা হয় এবং তার ভক্তিতে, সম্মানে, ভালোবাসায়, ভয়ে, আশায়, ভরসায় তার কাছে চেয়ে ও তাকে ডাকার মাধ্যমে তার অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা হয়। আর এই সকল বিষয় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা জায়েজ না। এজন্যই যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশ গোত্রের কাফেরদেরকে বলেছিলেন : ‘তোমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলো।’ তারা বলেছিল:
أَجَعَلَ الآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ
“সে কি সকল ইলাহকে এক ইলাহ বানিয়ে দিয়েছে। নিশ্চয়ই এটা বড় আশ্চর্যের বিষয়।’’[6]
তারা এই কালিমা থেকে বুঝতে পেরেছে যে, এটা সকল মূর্তির ইবাদাতকে বাতিল করে দেয় এবং ইবাদাতকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে দেয়। আর তারা এটা চায়নি। সুতরাং এই অর্থ থেকে স্পষ্ট হলো যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ ও দাবি হলো : ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একক সাব্যস্ত করা এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল কিছুর ইবাদাতকে পরিত্যাগ করা। কোনো বান্দা যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে তখন সে আসলে ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলাকে একক বলে ঘোষণা দেয় এবং তিনি ব্যতীত সকল কিছুর ইবাদাত যার মধ্যে মূর্তি, কবর, আওলিয়া ও সৎ লোকদের ইবাদাতও আছে এসবকে সে বাতিল বলে ঘোষণা দেয়।
আর এই বিষয়টা কবর পূজারি ও তাদের সাথে যাদের সাদৃশ্য আছে তাদের এই বিশ্বাসকে বাতিল সাব্যস্ত করে যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ হলো: আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বের স্বীকৃতি দেয়া। অথবা এর অর্থ হলো : তিনি এমন সৃষ্টিকর্তা যিনি সৃষ্টি করতে সক্ষম। আর এধরণের অনেক কথা বলে থাকে। (কেউ কেউ বলে) এর অর্থ হলো : আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুম দাতা নেই। আর তারা মনে করে, যে এটা বিশ্বাস করবে আর এটা দিয়েই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর ব্যাখ্যা করবে তবে সে তাওহীদকে বাস্তবায়ন করল যদিও সে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদাত করে থাকে, মৃতদের প্রতি বিশ্বাস রেখে তাদের নৈকট্য পাওয়ার জন্য পশু জবাই করে, নজর-মানত করে, তাদের কবরের তাওয়াফ করে ও তাদের কবরের মাটি থেকে বরকত নেয়।
তারা বুঝতে পারেনা যে, পূর্ববর্তী কাফেরদের সাথে এ বিষয়ে তাদের বিশ্বাসগত মিল রয়েছে। তারা জানতো যে, আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি সৃষ্টি করতে সক্ষম। আর তারা এটা স্বীকারও করত। তাদের দাবি অনুযায়ী তারা তাদের (মূর্তির) ইবাদাত শুধু এই জন্য করে যাতে তারা তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। এ (বিশ্বাসের) কারণে তারা তাদেরকে ইবাদাত করে না যে, তারা সৃষ্টি করে ও রিজিক দেয়।
হাকিমিয়্যাহ (আল্লাহ একমাত্র বিধানদাতা) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থের একটা অংশ; এটার মূল, প্রকৃত ও কাঙ্ক্ষিত অর্থ নয়। তাই শিরকে জড়িত থাকা অবস্থায় অধিকার, দণ্ডবিধান ও বিবাদের ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়াত দ্বারা বিচার করা যথেষ্ট নয়।
তারা যা দাবি করে সেটাই যদি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ হতো তাহলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মুশরিকদের মধ্যে কোনো বিবাদ থাকতো না। এমনটা হলে তারা দ্রুত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) দাওয়াত গ্রহণ করত যদি তিনি তাদেরকে বলতেন, তোমরা স্বীকার করো যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করতে সক্ষম, অথবা তিনি যদি বলতেন : তোমরা স্বীকার করো যে, আল্লাহ তাআলা আছেন। অথবা যদি তিনি তাদেরকে বলতেন : রক্ত (হত্যাকান্ড), সম্পদ ও অধিকারের ক্ষেত্রে তোমরা ইসলামী শরীয়াত থেকে বিধান নাও এবং (তিনি যদি এসব বলার সাথে তাদের) ইবাদাতের ব্যাপারে চুপ থাকতেন।
কিন্তু তারা আরবিভাষী মানুষ, তাই তারা বুঝতে পেরেছিল যদি তারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে তবে এর দ্বারা মূর্তিপূজাকে বাতিল বলে স্বীকার করা হয়ে যাবে। এটা অর্থহীন কোনো বাক্য নয় যা শুধু মুখে উচ্চারণ করা হয়। এজন্যই তারা এই বাক্য বলা থেকে পালিয়েছে। তারা বলেছে:
أَجَعَلَ الآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ
“সে কি সকল ইলাহকে এক ইলাহ বানিয়ে দিয়েছে। নিশ্চয়ই এটা বড় আশ্চর্যের বিষয়।’’[7]
আর যেমনটা আল্লাহ তাআলা তাদের ব্যাপারে বলেছেন:
إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لاَ إِلَهَ إِلا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُون - وَيَقُولُونَ أَإِنَّا لَتَارِكُو آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ
“আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই একথা তাদেরকে বললে তারা অহংকার করত – এবং তারা বলত, এক পাগল কবির কথায় আমরা কি আমাদের ইলাহদেরকে ত্যাগ করব? ’’[8]
তারা জানত যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাবি হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল কিছুর ইবাদাতকে ত্যাগ করা এবং একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করা। তারা যদি এটা বলত আর সাথে মূর্তিপূজাও চালিয়ে যেত তবে তাদের এই কাজ হতো স্ববিরোধী। আর তারা স্ববিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকে। কিন্তু বর্তমান যুগের কবরপূজারীরা নির্লজ্জ এই স্ববিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকছে না। তারা লা ইলাহা ইলাল্লাহ বলছে অতঃপর মৃত ব্যক্তিদের পূজা করছে ও কবর-মাজারের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে এসবের পূজা করে তা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ভঙ্গ করছে। তার ধ্বংস হোক যার তুলনায় আবূ জাহেল ও আবূ লাহাবও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ ভালোভাবে জানত।
إِلا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
“তবে তারা ব্যতীত যারা জেনে-শুনে সত্যের সাক্ষ্য দেয়।’’[9]
এই কালিমার দাবি অনুযায়ী আমল হলো, আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল কিছুর ইবাদাতকে পরিত্যাগ করা। আর একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতই হলো এই কালিমার উদ্দেশ্য।
গ্রন্থ : মা’না লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া মুকতাদাহা ওয়া আসারুহা ফিল ফারদি ওয়াল মুজতামা’, পৃষ্ঠা: ২৯-৩৫
লেখক: শাইখ সালিহ বিন ফাওযান বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান
প্রকাশনী : মদিনা ইউনিভার্সিটি, মদিনা। তৃতীয় সংস্করণ (১৪২২ হিজরী, ২০০২ খৃষ্টাব্দ)