Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর ব্যাখ্যা পার্ট-(৪)

Share On :

u

إعرابها وأركانها وشروطها

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর ইরাব (ব্যাকরণগত বিশ্লেষণ) , স্তম্ভসমূহ ও শর্তসমূহ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর ইরাব (ব্যাকরণগত বিশ্লেষণ), স্তম্ভসমূহ ও শর্তসমূহ

যেহেতু অর্থ অনুধাবনের বিষয়টি বাক্যের ব্যাকরণগত বিশ্লেষণ জানার উপর নির্ভরশীল তাই আলেমগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর ইরাবের গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা বলেছেন : “লা” হলো “নাফিয়াহ লিল জিনস” {অর্থাৎ ‘লা’ এর ইসমের (উদ্দেশ্য) অন্তর্ভুক্ত সকল কিছুকে নাকচ করে দেয়} এবং “ইলাহা” হলো “লা” এর ইসম যা ফাতহার উপরে “মাবনি”। আর “লা” এর “খবার” (বিধেয়) উহ্য যাকে “হাক্ব” ধরে নিতে হবে অর্থাৎ লা ইলাহা হাক্ব। আর ইল্লাল্লাহ মারফু খবার থেকে ইসতিসনা হয়েছে। আর “ইলাহ” এর অর্থ হলো যার ইবাদাত করা হয় অর্থাৎ মা’বূদ । ইলাহ হলো কোন উপকার পাওয়ার জন্য বা কোনো ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য অন্তর যাকে ভক্তি করে ও চায়।

 এর দুটি রুকন (স্তম্ভ) রয়েছে :

প্রথম স্তম্ভ : অস্বীকার করা।

দ্বিতীয় স্তম্ভ : সাব্যস্ত করা। অস্বীকার করা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো : আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকলের জন্য ইলাহিয়্যাহ (সত্য ইলাহ হওয়াকে) অস্বীকার করা। আর সাব্যস্ত করা বলতে একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য ইলাহিয়্যাহ সাব্যস্ত করাকে বুঝায়। কারণ তিনিই সত্য ইলাহ। আর আল্লাহ ব্যতীত মুশরিকরা যে সকল ইলাহ গ্রহণ করেছে ঐগুলো বাতিল।

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ

“এটা এজন্য যে আল্লাহই সত্য আর তারা যেসবের ইবাদাত করে ঐগুলো বাতিল।’’[1]

ইমাম ইবনুল কইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : আল্লাহ তাআলার ইলাহিয়্যাহ প্রমাণের ক্ষেত্রে اَللَّهُ إِلٰهٌ (আল্লাহ একজন ইলাহ) -এর চেয়ে لا إله إلا الله (আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই) অধিক শক্তিশালী প্রমাণ বহন করে। এটা এজন্য যে, ‘আল্লাহ একজন ইলাহ’ এই বাক্য আল্লাহ ব্যতীত অন্যদের জন্য ইলাহ হওয়াকে নাকচ করে না। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তার বিপরীত। কারণ এই বাক্যের দাবি হলো, এটা ইলাহিয়্যাহকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই সীমাবদ্ধ করে দেয় ও অন্যদের জন্য নাকচ করে দেয়। আর সে মারাত্মক ভুল ব্যাখ্যা করেছে যে বলেছে ইলাহ অর্থ হলো, যে সৃষ্টি করতে সক্ষম।

শাইখ সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ কিতাবুত তাওহীদের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেছেন : যদি বলা হয় যে, ইলাহ ও ইলাহিয়্যাহ শব্দের অর্থ তো স্পষ্ট হলো তবে যে বলে ইলাহ শব্দের অর্থ হলো যিনি সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন অথবা এ ধরনের আরো অনেক কথা বলে। তাদের জবাব কি হবে? বলা হবে যে, দুই ভাবে এর জবাব দেয়া যায়। একটা জবাব হলো : এটা নব-আবিষ্কৃত বিষয় । আলেম ও আরবি ভাষার ইমামদের মধ্যে কেউ এই কথা বলেছেন বলে জানা যায় না। আর আলেম ও আরবি ভাষার ইমামরা সেটাই বলেছেন যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি, তাই এই মতটা বাতিল।

দ্বিতীয় জবাব হলো : তাদের মতটা (তর্কের খাতিরে সঠিক) ধরে নিয়ে। আর তা হলো সত্য ইলাহের ক্ষেত্রে (তাঁর ইলাহ হওয়ার জন্য) যেসব বিষয় অপরিহার্য তা দিয়ে (এই বাক্য) ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে তাদের মতকে (তর্কের খাতিরে মেনে নেওয়া)। কারণ নিশ্চয়ই সত্য ইলাহের জন্য অপরিহার্য যে, তাঁকে এমন হতে হবে যিনি সৃষ্টি করতে সক্ষম। যদি এমনটা না হয় তাহলে সে ইলাহ নয় যদিও তাকে ইলাহ নামে নামকরণ করা হয়। এর উদ্দেশ্য এটা নয় যে, (কোনো ব্যক্তি শুধু ) জানল যে, তিনি ইলাহ যিনি সৃষ্টি করতে সক্ষম; তাহলে সে (এতটুকু বিশ্বাসের ভিত্তিতে) ইসলামে প্রবেশ করতে পারবে এবং সে দারুস সালামে (জান্নাতে) প্রবেশের চাবি ও তার শর্তগুলো পূর্ণ করে ফেলবে। নিশ্চয়ই কেউ একথা বলে না। কারণ একথা দ্বারা এটা আবশ্যক হয় যে, আরবের কাফেররাও মুসলিম ছিল। যদি ধরেও নেওয়া হয় যে পরবর্তীতে কিছু লোক এটাই বুঝিয়েছেন তাহলে তারা ভুল করেছেন। তাদেরকে কুরআন হাদিসের দলিল এবং যুক্তিনির্ভর দলিল দিয়ে জবাব দেওয়া হবে।

 লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর শর্তসমূহ :

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠকারীর জন্য কোনো কাজে আসবে না যদি না সে এই সাতটি শর্ত পূরণ করে :

১) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান – এতে কি অস্বীকার করতে হয় ও কি সাব্যস্ত করতে হয় তার জ্ঞান থাকা।
২) দৃঢ় বিশ্বাস – তা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান যাতে কোনো সংশয় সন্দেহ নেই।
৩) ইখলাস (একনিষ্ঠতা) – যা শিরকের বিপরীত।
৪) সত্যবাদিতা – যা মুনাফিকীর বিপরীত।
৫) এই কালিমার জন্য ভালোবাসা – এটা যে (অর্থ) বহন করে তার প্রতি ভালোবাসা এবং এই কালিমাহ নিয়ে খুশি/প্রফুল্ল থাকা।
৬) এই কালিমার হক (অধিকার) আদায়ের মাধ্যমে আনুগত্য স্বীকার করা। আর তা হলো একনিষ্ঠতার সাথে ও আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য সৎ আমলগুলো সম্পাদন করা।
৭) এই কালিমাকে গ্রহণ করা – যা প্রত্যাখ্যানের বিপরীত।

আলেমরা এই শর্তগুলো কুরআন-সুন্নাহ অধ্যয়ন করে বের করেছেন যা বিশেষ করে এই মহান কালিমার অধিকার ও শর্তসমূহ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। এই কালিমাহ শুধু মুখ দিয়ে বলার জন্য নয়।

গ্রন্থ : মা’না লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া মুকতাদাহা ওয়া আসারুহা ফিল ফারদি ওয়াল মুজতামা’, পৃষ্ঠা: ২৪-২৮

লেখক: শাইখ সালিহ বিন ফাওযান বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান

প্রকাশনী : মদিনা ইউনিভার্সিটি, মদিনা। তৃতীয় সংস্করণ (১৪২২ হিজরী, ২০০২ খৃষ্টাব্দ)

Recommended Readings

Support The Da'wah in Bangladesh

May Allāh Bless You

%d