
u
একটি প্রচলিত সন্দেহের ব্যাপারে শাইখ উবাইদ আল-জাবিরী (رحمه الله):
এটা খুব সাধারণ একটি সন্দেহ যা বিভিন্ন অভিব্যক্তি ও পদ্ধতির মাধ্যমে প্রচলিত।
এটা প্রায়শই আহলুল আহওয়াদের মধ্যে থেকে বিচারবুদ্ধিহীন, চক্রান্তকারী, প্রতারক দলেরা বোলে থাকে: “সত্য সবার কাছ থেকে গ্রহণ করা যায়” এবং কখনও কখনও তাদের এই কথার মাধ্যমে তারা বুঝাতে চায়: “যে কেউ তা নিয়ে আসুক না কেন সত্যকে তার কাছ থেকে গ্রহণ করো।”
আমি বলি, এই সন্দেহটি যেভাবেই ব্যক্ত করা হোক না কেন:
প্রথমত: এই বিষয়ে মূলনীতি হলো, আহলুল হক ব্যতীত অন্য কোনো উৎস থেকে সত্যকে অন্বেষণ করা হয় না, এবং শরীয়াতের ইলমকে এর কর্ণধার ব্যতীত (অন্য উৎস থেকে) আহরণ করা হয় না, যারা ইলমে সুপ্রতিষ্ঠিত ও যারা সুন্নাহকে আকড়ে ধরে থাকেন। এটাই হলো মূলনীতি।
দ্বিতীয়ত: সুন্নাহ দ্বারা পরীক্ষিত হওয়ার পর যা কিছু এর সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করে, অর্থাৎ কোনো সুন্নাহর অনুসারী ব্যতীত যদি তা কোনো কাফের বা বিদআতীর কাছ থেকে আমাদের নিকটে আসে, তাহলে তার দুটি অবস্থা:
তন্মধ্যে প্রথমটি: তা সুন্নাহর সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করে, তাই আমরা তা গ্রহণ করি। অন্যটি: তা সুন্নাহর বিরোধিতা করে, তাই আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি।
অথবা আপনি যদি চান, আপনি বলতে পারেন: সত্যকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দুটি প্রেক্ষাপট আছে:
প্রথমত: অন্বেষণ করা ও অনুসন্ধান করা, প্রচেষ্টা চালানো ও তদন্ত করার প্রেক্ষাপট। এটা শুধুমাত্র আহলুস সুন্নাহর কাছ থেকে গৃহীত, তাই এই ক্ষেত্রে বিচক্ষণ হোন, কেননা এই ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, শরীয়াতের কর্ণধারগণ (أهل الشرع) ও আহলুস সুন্নাহ এক ও অভিন্ন।
এখানে আপনি বলতে পারেন যে, শরীয়াতের কর্ণধার (أهل الشرع) দুই প্রকার: এক প্রকার হলো যিনি সুন্নাহর অনুসারী, এবং এটাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিষয়; এবং তার ইলম থেকে যা পাওয়া যায় তা আমরা প্রত্যাশা করি, তবে অন্যজন, যদিও তিনি শরীয়াতের কর্ণধার (أهل الشرع) হিসেবে পরিচিত, তিনি পথভ্রষ্ট বিদআতী।
সত্য ও গ্রহণযোগ্যতার দ্বিতীয়তম পন্থা হলো: অর্থাৎ, যখন কোনো কাফের বা বিদআতী সুন্নাহর সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করে, তখন আমরা তা গ্রহণ করি। তবে এটা কি সেই ব্যক্তির কারণে আমরা গ্রহণ করছি যিনি আমাদের কাছে সত্য নিয়ে এসেছেন, নাকি তিনি সুন্নাতের সাথে ঐক্যমত্য পোষণকারী বিধায় আমরা তা গ্রহণ করছি? অবশ্যই সুন্নাতের সাথে একমত হওয়ার কারণে তা করছি।
মন্তব্য
১. এই সন্দেহগুলো বিদআতী ও হিযবীরা প্রচার করে যারা সুন্নাহ বিরোধী নির্দিষ্ট কোনো দল, আকীদাহ এবং মানহাজ নিয়ে গোঁড়ামি করে। তারা সুন্নাহর অনুসারীদেরকে বিদআতীদের কাছ থেকে শরীয়াতের ইলম নিতে উৎসাহিত করতে চায় যেন তারা তাদের মধ্যে নিজেদের অনুপ্রবেশের পথ করে নিতে পারে ও তাদের দুর্বল করে ফেলতে পারে ও তাদের (সুন্নাহর) অনুসারীদের ছিনিয়ে নিতে পারে।
২. শাইখ (رحمه الله) ব্যাখ্যা করেছেন যে এই ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, যখন আমরা ইলম অন্বেষণ করি, অর্থাৎ আমরা যখন ইলম অর্জনের পথে বের হই, মসজিদে যাই, ইলম অর্জনের জন্য সফরে বের হই, তখন আমরা কেবলমাত্র আহলুস সুন্নাহ থেকে তা অন্বেষণ করি। সুতরাং, যখনই পবিত্রতা, নামায, হজ সংক্রান্ত বিধি-বিধান অথবা কুরআন ও হাদীসের উলূম থেকে বিশেষ কোনো উলূম আমরা অধ্যয়ন করতে ও শিখতে চাই, তখন আমরা কেবলমাত্র আহলুস সুন্নাহর কাছ থেকেই তা শিখি। এই হলো প্রথম অবস্থা।
৩. দ্বিতীয় অবস্থা হলো ঘটনাক্রমে, সাক্ষাতে অথবা কোনো ব্যক্তি, কিতাব বা এর অনুরূপ কিছুর সংস্পর্শে আসার পর, অর্থাৎ সুন্নাহর অনুসারী ব্যতীত কোনো কাফের বা বিদআতীর কাছ থেকে যদি আমাদের কাছে কিছু বর্ণনা করা হয়, সেক্ষেত্রে সে যা বর্ণনা করে, লিখে বা প্রচার করে তা যদি সুন্নাহর সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করে, তাহলে আমরা তা গ্রহণ করি কারণ তা সত্য, এবং তা মোটেও এই জন্য গ্রহণ করি না যে, সেই ব্যক্তিকে আমরা এমন কেউ বানিয়ে নিয়েছি, বা তাকে এমন কোনো ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করছি যার কাছ থেকে সত্যকে তলব করা হয় বা শেখা হয়।
৪. বিশেষ করে এই ব্যাখ্যা (تفصيل) দ্বারা আমরা প্রতিষ্ঠিত করি যে, নিশ্চয়ই আহলুস সুন্নাহ সত্যকে গ্রহণ করে সেটা যখনই তাদের কাছে আসুক এবং যেখান থেকেই আসুক না কেন, কিন্তু (মূল বিষয় হলো) তারা কেবল একটি উদ্দেশ্যকে নিয়ে তা অন্বেষণ করেন ও সুন্নাহর অনুসারীদের কাছ থেকেই তা তলব করেন।
৫. শাইখ (رحمه الله) আরও ব্যাখ্যা করেছেন যে, শরীয়াতের কর্ণধারগণ (أهل الشرع), যারা শরীয়াতের বিধান সম্পর্কে লিখেন ও বক্তব্য রাখেন, অর্থাৎ যারা ইসলামের আলিম, তারা দুই ধরনের। যারা আহলুস সুন্নাহ, তাঁরা সালাফী মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত, তাই তাঁরা হলেন এই ইলমের ভিত্তি। তাই নিজেদের শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে আমরা তাদের কাছ থেকে তা তলব করি। তবে হ্যাঁ, বিদআতী ও পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদের মাঝেও আলিম-উলামা বিদ্যমান, এবং বিদআত ও পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদের আকীদাহ-মানহাজ ও বক্তব্যের দ্বারা কমবেশি আক্রান্তদের মাঝেও আলিম বিদ্যমান। কিন্তু তারা আমাদের জন্য ইলমের ভিত্তি নয়, তবে যদি তাদের কাছে কোনো বিষয়ে সত্যটা থাকে বা তা প্রকাশিত হয় ও তা আমাদের কাছে নিয়ে আসা হয়, তবে আমরা তা অবশ্যই গ্রহণ করব, কারণ তা সত্য। [২]
৬. শাইখ উবাইদ (رحمه الله) এখানে প্রমাণ দিতে গিয়ে বলেছেন যে, যদি কোনো ইহুদী বা খ্রিষ্টান আমাদের নিকট আসে এবং বলে: “তাওরাতে আমরা পড়ি, আসমান সাতটি ও পৃথিবী সাতটি এবং এর মাঝে আল্লাহর আদেশ অবতীর্ণ হয়।” তাহলে আমরা বলব যে, এটি সঠিক এবং কুরআন দ্বারা সমর্থিত (৬৫:১২)। এবং শাইখ (رحمه الله), এই ক্ষেত্রে বুখারী কর্তৃক কিতাবুত তাফসীরে বর্ণিত ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীসের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন যে, “তারা আল্লাহর যথোচিত সম্মান করেনা।…” (কুরআন, ৩৯:৬৭) যখন জনৈক ইহুদী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল যে, আল্লাহ সমস্ত আকাশকে একটি আঙ্গুলের উপর, সমস্ত জমীনকে একটি আঙ্গুলের উপর, সমস্ত গাছপালাকে একটি আঙ্গুলের উপর ইত্যাদি স্থাপন করবেন, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসলেন যতক্ষণ না তাঁর মাঁড়ির দাত দেখা যাচ্ছিল অতঃপর এর সত্যায়নস্বরূপ সেই আয়াতটির তিলাওয়াত করলেন।
৭. পরিশেষে, এটা বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কিছু সংখ্যক আলিম যেমন শাইখ ইবনুল উসাইমীন (رحمه الله) এই মত পোষণ করতেন যে, আরবি ভাষার মতো নিরপেক্ষ একটি বিষয় যা আকীদাহ বা মানহাজের সাথে সম্পৃক্ত নয়, ঐ ধরনের ইলমও একজন বিদআতীর কাছ থেকে অন্বেষণ করা বা শেখা উচিত নয়। কেননা, এটা একটা মাধ্যম, যা সেই সমস্ত বিচ্যুতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় যা তার (বিদআতীর) ইলমের শাখা-প্রশাখার মাঝে বিদ্যমান, এবং এমনও হতে পারে যে সেই বিচ্যুতি বাস্তবে ঐসব নিরপেক্ষ বিষয়ের ভেতরে প্রবেশ কোরে ফেলেছে।
টীকা:
১. আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ (দারুল মীদাদ, ১৪৩৯) পৃ.১৬১-১৬২।
২. বিষয়টি এমন হতে পারে যে অতীতের কিছু আলিম যারা বিদআত দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন অথচ তারা তাফসীর, ফিক্বহ বা হাদীস ইত্যাদির ক্ষেত্রে মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং তাদের ঐ লিখনি হয় বিদআতমুক্ত ছিল বা সেগুলোর ভুল-ত্রুটি ইতিমধ্যে সমালোচকদের দ্বারা বিশদভাবে নিরীক্ষিত হয়েছে, তাই শিক্ষাদানে সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। যাইহোক, সত্য সংক্রান্ত এমন কিছু পাওয়া যাবে না যে বিষয়ে সুন্নাহর আলিমদের মধ্যে যারা সালাফী মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত, ইতিপূর্বে কিছু না কিছু লিখেননি।