Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

নিশ্চয়ই আগামীর দিনগুলো ইসলামের হবে

Share On :

Print Friendly, PDF & Email

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على رسوله الأمين وبعد

মহান আল্লাহ বলেন:

“তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, সকল দীনের উপর একে বিজয়ী করার জন্য, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” [সূরাহ আত-তাওবাহ: ৩৩]

এই সুমহান আয়াতটি আমাদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, নিশ্চয়ই আগামী দিনগুলো ইসলামেরই হবে এবং তা হবে যাবতীয় দীনের উপর এর চূড়ান্ত আধিপত্য, প্রভাব বিস্তার ও বিজয় লাভ এবং কর্তৃত্বের কারণে। আর যদিও কিছু লোক এটা ভাবতে পারে যে, তাঁর (ﷺ)-এর এই প্রতিশ্রুতিটি তাঁর যুগ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীন ও সৎকর্মশীল রাজাদের যুগে ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত ও পূর্ণ হয়েছে, তবে বিষয়টি এমন নয় – কেননা যা কিছু পূর্ণ হয়েছে তা এই সত্য ও একনিষ্ঠ প্রতিশ্রুতির একটি অংশ মাত্র; যেমনটি নবী (ﷺ) তাঁর বাণীতে ইঙ্গিত দিয়েছেন:

১. “রাত এবং দিন শেষ হবে না, যতক্ষণ না (পুনরায়) লাত ও উযযার উপাসনা করা হবে। তাই ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) মহান আল্লাহ যখন পবিত্র কুরআনে নাযিল করলেন – “তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, সকল দীনের উপর একে বিজয়ী করার জন্য, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর আমি তো ভেবেছিলাম এ প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, “নিশ্চয়ই এত্থেকে আল্লাহ যা চান তা (আসন্ন বিজয়) অবশ্যই ঘটবে”[]

ইসলামের বিস্তৃতি সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীসও রয়েছে যেগুলো এর কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করা সহ তা কতদূর প্রসারিত হবে সে বিষয়কে স্পষ্ট করে; যেন এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ না থাকে যে, আগামীর দিনগুলো আল্লাহর অনুমতিতে ও তাঁর তাওফীক্ব সহকারে ইসলামেরই হবে।

তাই আমি এখানে কিছু সহজ হাদীস উদ্ধৃত করব এবং উপস্থাপন করব; সম্ভবত এটি ইসলামের জন্য যারা কাজ করছেন তাদের উৎসাহ ও সংকল্পকে শক্তিশালী করার একটি কারণ হবে আর এটি তাদের বিরুদ্ধে একটি নিষ্পত্তিমূলক প্রমাণ হবে যারা হতাশাগ্রস্ত এবং আল-মুতাওয়াকিলীন (পরিত্যক্তকারী ও বিচ্ছিন্নবাদী)। [রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন]:

২. “নিশ্চয়ই আল্লাহ এই পৃথিবীকে আমার জন্য একত্রিত করে (দেখিয়েছেন) এবং আমাকে এর পূর্ব ও পশ্চিম সীমানা দেখানো হয়েছে। আর পৃথিবীর যুতটুকু আমার (দেখার) জন্য একত্রিত করা হয়েছে, ততটুকুতে আমার উম্মাতের কর্তৃত্ব অবশ্যই বিস্তার করবে।”[২]

আর এর চাইতে স্পষ্ট এবং আরও সাধারণ হলো এই নিম্নোক্ত হাদীস:

৩. “নিশ্চয়ই এই বিষয়টি (ইসলাম) রাত ও দিন যতদূর পৌঁছেছে ততদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে। আর আল্লাহ তা‘আলা এমন কোনো মাদার (মাটির ইট দিয়ে তৈরি ঘর) অথবা ওয়াবার (পশম ইত্যাদি দিয়ে তৈরি ঘর অর্থাৎ তাঁবু) অবশিষ্ট রাখবেন না যেখানে তিনি ইসলামকে প্রবেশ করাবেন না – (এর দ্বারা) তিনি প্রত্যেক সম্মানিত ব্যক্তিকে (যে দীন ইসলামকে কবুল করবে তাকে) সম্মানিত করবেন এবং প্রত্যেক লাঞ্ছিতকে (অর্থাৎ যে দীন ইসলামকে অস্বীকার করবে তাকে) অপদস্থ করবেন। (সেই) সম্মান যার মাধ্যমে আল্লাহ ইসলাম (ও মুসলিমদের) সমুন্নত করেন, আর সেই অবমাননা যার মাধ্যমে আল্লাহ কুফরকে (এবং কাফিরদের) অবদমিত করবেন।”[৩]

যে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই তা হলো, (ইসলামের) এই প্রসারকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুসলিমদেরকে তাদের মা‘নাওইয়াত (আক্বীদাহ ও রুহানী শক্তি) এবং তাদের বস্তুগত ও সামরিক খাতগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে; যাতে কুফর ও জুলুমের পরাশক্তিগুলোর উপর তারা বিজয় ও সফলতা লাভ করতে পারে। আর নিম্নোক্ত হাদীসটি আমাদেরকে এরই সুসংবাদ দেয়:

৪. আবূ ক্বাবীল থেকে বর্ণিত, যিনি বলেছেন যে, আমরা ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর বিন আল-‘আস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “দুটি শহরের মাঝে কোনটি প্রথমে জয় করা হবে; কুস্তান্তিনিয়্যাহ (কনস্টান্টিনোপল) নাকি রুমিয়াহ (রোম)? অতঃপর ‘আবদুল্লাহ একটি সিল করা বাক্স তাঁর নিকট আনতে বললেন। তিনি (আবূ ক্বাবীল) বললেন: ‘এরপর তিনি এর ভেতর থেকে একটি কিতাব বের করলেন অতঃপর ‘আবদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন: “আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহচর্যে লিখছিলাম (অর্থাৎ হাদীস লিপিবদ্ধ করছিলাম) তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: “দুটি শহরের মাঝে প্রথমে কোনটি জয় করা হবে – কনস্টান্টিনোপল নাকি রোম?” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উত্তরে বললেন: “প্রথমে হিরাক্লিয়াসের শহর জয় করা হবে।” অর্থাৎ কনস্টান্টিনোপল।”[৪]

প্রথম বিজয় (কনস্টান্টিনোপল) – যা সুবিদিত – যা মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ আল-উসমানীর হাতে বিজিত হয়েছিল এবং তা নবী (ﷺ)-এর প্রদত্ত ভবিষ্যদ্‌বাণীর ৮০০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ঘটেছিল। আর দ্বিতীয় বিজয় (রোম) মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমেই ঘটবে এবং তা অনিবার্য “আর তোমরা অচিরেই এর (যাবতীয়) সত্যতা সম্পর্কে জানতে পারবে।”[৫]

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, দ্বিতীয় বিজয় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুসলিমদের মাঝে হিদায়াতপ্রাপ্ত খিলাফতের প্রত্যাবর্তন বাঞ্ছনীয়। আর এর সুসংবাদটি রাসূল (ﷺ)-এর বক্তব্যের দ্বারা নিম্নোক্ত হাদীসে আমাদের নিকট ব্যক্ত হয়েছে:

৫. “আল্লাহ যতদিন চান ততদিন তোমাদের মাঝে নবুওয়াত থাকবে আর যখন আল্লাহ চান তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। এরপর আসবে নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খিলাফত; যতদিন আল্লাহ চান ততদিন তা থাকবে, আর যখন আল্লাহ চান তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। এরপর আসবে মুলূকিয়্যাত (রাজতন্ত্র), যতদিন আল্লাহ চান ততদিন তা থাকবে, আর যখন আল্লাহ চান তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। এরপর আসবে জাবারিয়্যাত (শক্তি প্রয়োগ, জোর-জবরদস্তিমূলক রাজতন্ত্র)। যতদিন আল্লাহ চান ততদিন তা থাকবে, আর যখন আল্লাহ চান তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। এরপর আসবে নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খিলাফত।” এরপর তিনি নীরব থাকলেন।”[৬]

এছাড়াও, নিশ্চিতরূপে, মুসলিমদের জন্য তাদের আসন্ন সুসংবাদগুলোর মধ্যে আছে তাদের (হারানো) শক্তির প্রত্যাবর্তন আর পৃথিবীকে এমন কিছু দিয়ে গড়ে তোলার (বার্তা) যা তাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে, সেই সাথে এক মহা সুসংবাদ রয়েছে যে, নিশ্চয়ই মুসলিমদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, এমনকি কৃষি ও অর্থনীতিতেও (উন্নয়ন ঘটবে)। তিনি (ﷺ) তাঁর হাদীসে উল্লেখ করেছেন:

৬. ‘‘ততদিন কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা যে পর্যন্ত না আরব উপদ্বীপ চারণভূমি ও নদী-নালায় পরিপূর্ণ হবে।”[৭]

নিশ্চয়ই এই হাদীসের সুসংবাদ ইতোমধ্যেই আরব উপদ্বীপের কিছু অঞ্চলে বাস্তবায়িত ও আবির্ভূত হতে শুরু করেছে কেননা আল্লাহ এই অঞ্চলগুলোতে পর্যাপ্ত খাইরাত (কল্যাণ), বরকত (অনুগ্রহ ও নিয়ামত) ও সরঞ্জাম দিয়েছেন যা ব্যবহার করে মরুভূমির অতল গভীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি আহরণ করা যাচ্ছে। একইভাবে, আমরা স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোতে পড়েছি যে, সরাসরি ফুরাত নদী থেকে আরব উপদ্বীপে পানি সরবরাহ করার প্রস্তাবনা আছে; হয়ত তা সত্যিই একদিন বাস্তবায়িত হবে। নিশ্চয়ই, যে অপেক্ষমান তার জন্য আগামীর দিন অতি নিকটবর্তী। কিন্তু, ঠিক এই মুহূর্তে আমাদেরকে যা জানতে হবে (এবং প্রচার করতে হবে) তা হলো রাসূল (ﷺ)-এর এই বাণী: “তোমাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ না হওয়া পর্যন্ত [তোমরা ধৈর্যধারণ করবে], কেননা নিশ্চয়ই, তোমাদের উপর এমন একটি সময় আপতিত হবে যে সময়ের চাইতে তার পরবর্তী সময় আরও কঠিন হবে।”[৮]

তাই এই হাদীসকে পূর্ববর্তী হাদীস সহ অন্যান্য (হাদীসের) আলোকে বুঝা অত্যাবশ্যক; যেমন আল-মাহদী ও ঈসা (‘আলাইহিস সালাম)-এর অবতরণ সংক্রান্ত হাদীসগুলো। কারণ সে (হাদীসগুলো) ইঙ্গিত করে যে, এই হাদীসকে এর সাধারণ অর্থে (অর্থাৎ ঢালাওভাবে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া) গ্রহণ করা উচিত হবে না। বরং, একে এর (ব্যতিক্রম সহ) সাধারণতার উপর বিবেচনা করতে হবে যার একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। সুতরাং, মানুষকে (এই হাদীসটি) এর সাধারণ অর্থেই গ্রহণ করতে হবে বলে শিক্ষা দেওয়া বা তাদেরকে তা এভাবে বোঝানো বৈধ হবে না, কারণে এতে তারা নিরাশ হয়ে পড়বে আর একজন মুমিনের বিবরণ এরকম হওয়া সঠিক ও উপযুক্ত নয়। “নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত থেকে কেউ নিরাশ হয় না, শুধু কাফের সম্প্রদায় ব্যতীত।” [সূরাহ ইউসুফ ১২:৮৭]

আমি আল্লাহর নিকট দু’আ করছি তিনি যেন আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে ঈমানদার বানিয়ে দেন।

সূত্র: শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী কর্তৃক সিলসিলাহ আল-আহাদীস আস-সাহীহাহ (১/৩৩-৩৬)

পাদটীকা:


[১] মুসলিম (নং ২৯০৭) সহ অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন। আমি তাহযীর আস-সাজিদ মিন ইত্তিখায আল-কুবূর মাসাজিদ (পৃ. ১২২) গ্রন্থে এর উৎস উল্লেখ করেছি এবং এটি আল-ফিতান গ্রন্থে আল-হাফিয আদ-দানী (৫৮-৫৯) বর্ণনা করেছেন।

অনুবাদকের টীকা: সম্পূর্ণ হাদীসটি নিম্নে পেশ করা হলো: “রাত ও দিন শেষ হবে না, যতক্ষণ না (পুনরায়) লাত ও উযযার উপাসনা করা হবে। এ কথা শুনে আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) মহান আল্লাহ যখন পবিত্র কুরআনে নাযিল করলেন – “তিনিই তার রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, সকল দীনের উপর একে বিজয়ী করার জন্য, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” এ আয়াত নাযিলের পর আমি তো ভেবেছিলাম এ প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ এত্থেকে যা চান তা (আসন্ন বিজয়) অবশ্যই ঘটবে। অতঃপর তিনি এক মনোরম বাতাস প্রেরণ করবেন। ফলে যাদের অন্তরে সরিষার দানা সমতুল্য ঈমান থাকবে তাদের প্রত্যেকেই মৃত্যুবরণ করবে। পরিশেষে যাদের মাঝে কোনো প্রকার কল্যাণ থাকবে না শুধু তারাই বেঁচে থাকবে। অতঃপর তারা পুনরায় তাদের পিতৃ-পুরুষদের দীনের (শিরকের) দিকে ফিরে যাবে।” শাইখ আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন: “সুতরাং এই হাদীসে স্পষ্টতা রয়েছে যে, (উপরিউক্ত) আয়াতে বর্ণিত ইসলামের চূড়ান্ত আধিপত্য এখনও পূর্ণ হয়নি। এটি শুধুই ভবিষ্যতে বাস্তবায়িত হবে ও পূর্ণ হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) ইন্তেকালের পর হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের যুগে এবং তাঁদের পরবর্তীতে যারা স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তাদের সময়ে এই আধিপত্যের বৃত্ত বেড়েছে ও প্রসারিত হয়েছে। তবে এটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হবে না যতক্ষণ না ইসলাম সমগ্র বিশ্বের উপর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ করবে এবং নিশ্চয়ই তা ভবিষ্যতে ঘটবে কারণ আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তাঁর (ﷺ) থেকে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: “নিশ্চয়ই এই বিষয়টি (ইসলাম) রাত ও দিন যতদূর পৌঁছেছে ততদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে…” [তাহযীর আস-সাজিদ (পৃ. ১৫৮)]।

[২] সাওবান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে মুসলিম (৮/১৭১, [নং ২৮৮৯]), আবূ দাঊদ (নং ৪২৫৮), আত-তিরমিযী (২/২৭), ইবনু মাজাহ (নং ২৯৫২) এবং আহমাদ (৫/২৭৮ ও ২৮৪) বর্ণনা করেছেন, আর একইভাবে শাদ্দাদ ইবনু ‘আওস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীস থেকে আহমাদ (৪/১২৩) বর্ণনা করেছেন – যদিও তা মাহফূয। ‘যাওয়া’ [শব্দটি] (যা এখানে ‘একত্রিত করা’ হিসেবে অনূদিত হয়েছে)-এর অর্থ হলো একত্রিত করা ও মিশিয়ে দেওয়া/মিলিত করা।

অনুবাদকের টীকা: সুনান আবী দাঊদ (নং ৪২৫২) অনুযায়ী সম্পূর্ণ হাদীস: সাওবান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ এই পৃথিবীকে আমার জন্য একত্রিত করে (দেখিয়েছেন) এবং আমাকে এর পূর্ব ও পশ্চিম সীমানা দেখানো হয়েছে। আর পৃথিবীর যুতটুকু আমার জন্য একত্রিত করা হয়েছে, ততটুকুতে আমার উম্মাতের কর্তৃত্ব অবশ্যই বিস্তার করবে। আমাকে লাল ও সাদা (স্বর্ণ ও রৌপ্যের) দু’টি ধনভাণ্ডার দেয়া হয়েছে। আর আমি আমার মহান প্রতিপালকের নিকট আমার উম্মতের জন্য এই দু‘আর আবেদন করেছি যে, তিনি যেন তাদের সবাইকে দুর্ভিক্ষ দিয়ে ধ্বংস না করেন আর তাদের নিজেরা ব্যতীত তাদের উপর কর্তৃত্ব লাভে সক্ষম এমন শত্রু দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস না করেন। নিশ্চয়ই আমার রব আমাকে বলেছেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আমি যা ফায়সালা করি, তা বাতিল হয় না। তবে আমি তাদের সবাইকে একসঙ্গে দুর্ভিক্ষ দিয়ে ধ্বংস করব না এবং তাদের নিজেদের ব্যতীত দিগ্বিদিক থেকে আগত সমূলে বিনাশকারী কাফির শত্রুদেরকে তাদের উপর কর্তৃত্ব লাভ করতে দিবো না; এমনকি যদি পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে লোকেরা তাদের বিরুদ্ধে (তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য) একত্রিতও হয়; তবে তাদের (মুসলিমদের) কেউ কেউ অপরকে ধ্বংস করবে আর কেউ কেউ অপরকে বন্দী করবে।” অন্য আরেক হাদীসে এই বর্ণনাটি পাওয়া যায়: “আমি আমার উম্মতের জন্য যা সবচেয়ে বেশি ভয় করি তা হলো আইম্মাতুল মুদ্বিল্লীন (পথভ্রষ্ট ‘আলিম ও শাসক গোষ্ঠী)। আর আমার উম্মত যখন পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হবে, তখন কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা বিরত হবে না। আর আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক লোকেরা মুশরিকদের সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এবং আমার উম্মতের কতিপয় গোত্রআল-আওসান (মূর্তি) পূজায় লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। নিশ্চয়ই আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব ঘটবে, তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবি করবে। অথচ আমিই সর্বশেষ নবী এবং আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না। [অন্য আরেক বর্ণনায় উপ- বর্ণনাকারী] ইবনু ঈসা বলেছেন: “আর আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা সত্যের উপর বিজয়ী থাকবে।” অতঃপর সকল বর্ণনাকারীগণ এ বিষয়ে একমত: “আর যারা তাদের বিরোধিতা করবে, তারা তাদের কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না, এমনকি (তারা ঐ অবস্থায় থাকাকালীন) আল্লাহর নির্দেশ এসে যাবে।”
*লাল ও সাদা বলতে কিসরাহ ও কায়সারের ধন ভাণ্ডারকে বুঝানো হয়েছে। যেহেতু কিসরাহ সাম্রাজ্যের সম্পদ প্রধানত স্বর্ণ ছিল আর কায়সারের সম্পদ ছিল রৌপ্য।

[৩] তামিম [বিন ’আওস] আদ-দারী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলতেন: “আমি আমার নিজ ঘরে এর (অর্থ) জেনেছি। তাদের মাঝে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল তারা আল-খাইর (কল্যাণ), মর্যাদা ও সম্মান লাভ করেছিল। কিন্তু তাদের মাঝে যারা কাফির ছিল তারাই পেয়েছিল লাঞ্ছনা, অধঃপতন ও জিযিয়া।”
তাহযীর আস-সাজিদে (পৃ. ১২১) আমি উল্লেখ করেছি যে, এটি একদল ‘আলিম কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে: [আহমাদ (৪/১০৩), ইবনু বিশরান (৩৩৯হি – মৃ. ৪৩০হি) আল-আমালি (১/৬০) [নং ৩৬৪), দারুল ওয়াতান মুদ্রণ, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৮হি/১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ], আত্ব-ত্বাবারানী আল-মু‘জাম আল-কাবীর, (১/১২৬/১), ইবনু মানদাহ কিতাব আল-ঈমান (১/১০২), যিকরুল-ইসলামে হাফিজ ‘আব্দুল গানী আল-মাক্বদিসী, (১/১৬৬) এবং তিনি বলেছেন: “(এই) হাদীসটি হাসান সহীহ।” আল-হাকিম (৪/৪৩০-৪৩১) বলেছেন: “(এটি) দুই শাইখ (অর্থাৎ আল-বুখারী ও মুসলিম)-এর নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী সহীহ।” আর ইমাম আয-যাহাবী তার সাথে একমত! অথচ তা কেবল মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ। এছাড়াও, তিনি (আল-হাকিম) এবং ইবনু মানদাহ-এর কাছে এই হাদীসের সমর্থনমূলক একটি বর্ণনা রয়েছে, তা হলো মিক্বদাদ ইবনুল আসওয়াদের হাদীস এবং এটিও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ]। এটি ইবনু হিব্বান তার “সহীহ” (নং ১৬৩১, নং ১৬৩২) এবং আবূ ‘উরূবা তাঁর আল-মুনতাক্বা মিন আত্ব-ত্বাবাক্বাতেও (২/১০/১) বর্ণনা করেছেন; এবং আবূ সা’লাবাহ আল-খুশানী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীসে এর অনুরূপ একটি সমর্থনমূলক বর্ণনা রয়েছে যা (নবী পর্যন্ত) মারফূ’ হয়েছে, (এটি) আল-হাকিম (৩/১৫৫) বর্ণনা করেছেন যিনি একে সহীহ প্রমাণ করেছেন কিন্তু আয-যাহাবী তা খণ্ডন করেছেন।

[৪] আহমাদ (২/১৭৬), আদ-দারিমী (১/১২৬), ইবনু আবী শায়বাহ তাঁর আল-মুসান্নাফ (৪৭/১৫৩/২) গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন, আবূ ‘আমর আদ-দানী আস-সুনান আল-ওয়ারিদাহ ফিল-ফিতান গ্রন্থে (১১৬/২), আল-হাকিম (৪/৪২২, ৫০৮ ও ৫৫৫), ‘আব্দুল গানী আল-মাক্বদিসী কর্তৃক কিতাব আল-‘ইলম (২/৩০/১); তিনি বলেছেন: ‘হাদীসটি তার ইসনাদ অনুযায়ী হাসান।’ আর এটি আল-হাকিম কর্তৃক সহীহ সাব্যস্ত হয়েছে আর এই বিষয়ে আয-যাহাবী তাঁর সাথে একমত – এবং এ বিষয়ে তারা যা যা বলেছেন বিষয়টি তেমনই (অর্থাৎ সহীহ)। “রুমিয়্যাহ” হলো রোম – যেমনটি মু‘জাম আল-বুলদানে উল্লেখ রয়েছে – আজ ইতালির রাজধানী। ‘আবদুল্লাহ [বিন আল-‘আমর বিন আল-‘আস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)]-এর এই বক্তব্যটি আবূ যুর‘আহ তারীখ আদ-দামিশক (৯৬/১) গ্রন্থেও উল্লেখ করেছেন এবং এটি নবী (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় যে হাদীস লিপিবদ্ধ করা হতো সে বিষয়ে একটি নির্ণায়ক প্রমাণ যা কিছু খাররাসূনদের (মিথ্যাবাদী ও ভুল তথ্য প্রদানকারী যারা আল্লাহ ও তাঁর দীনের ব্যাপারে সন্দেহ ছড়ায়) ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক।

[৫] অনুবাদকের টীকা: ইবনু কাসীর তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেছেন: “এবং আপনি নিশ্চয়ই এর সত্যতা জানতে পারবেন…” অর্থাৎ – এসম্পর্কিত বার্তা এবং এর সত্যতা – “অচিরে” অর্থাৎ এর সময় নিকটবর্তী। শাইখ আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন: “সুতরাং তাদের রবের কাছে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে, তাঁর কিতাব বাস্তবায়নের মাধ্যমে, তাঁর নবী (ﷺ)-এর সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে, তাঁর নিষেধাজ্ঞাগুলোকে পরিহার করার মাধ্যমে এবং আল্লাহ যা কিছু পছন্দ করেন ঐসবকিছুর উপর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রস্তুত করা মুসলিমদের জন্য ওয়াজিব। (নিশ্চয়ই আল্লাহ) তিনি সকল অপূর্ণতা থেকে মুক্ত, তিনি সুউচ্চ।” [তাহযীর আস-সাজিদ (পৃ. ১৫৯)]।

[৬] আহমাদ (৪/২৭৩) বর্ণনা করেছেন, যিনি বলেছেন: “সুলাইমান বিন দাঊদ আত-তায়ালিসী আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, দাঊদ বিন ইবরাহীম আল-ওয়াসীতী আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, হাবীব বিন সালিম আমাদের কাছে আন-নু’মান বিন বাশীরের সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যিনি বলেছেন: “আমরা মসজিদে বসে ছিলাম – এবং বাশীর এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যিনি অধিক কথা বলা হতে বিরত থাকতেন – তাই আবূ সা‘লাবাহ আল-খুশানী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এসে বললেন: ‘হে বাশীর বিন সা’দ! আপনি কি শাসকদের (আল-‘উমারা) সম্পর্কে আল্লাহর রাসূলের কোনো হাদীস মুখস্থ করেছেন? তাই হুযায়ফাহ [বিন আল-ইয়ামান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন: ‘আমি তাঁর খুত্ববা মুখস্থ করেছি।’ অতঃপর আবূ সা‘লাবাহ বসলেন এবং হুযায়ফাহ বললেন: [আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: “যতদিন আল্লাহ চান ততদিন তোমাদের মাঝে নবুওয়াত থাকবে…]। হাবীব (একজন উপ-বর্ণনাকারী) বলেছেন: “যখন ‘উমার বিন ‘আব্দুল-আযীয (খলিফা হিসেবে) প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, ইয়াযীদ বিন আন-নু’মান ইবনু বাশীর ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ সহচরদের একজন, তাই আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই একই হাদীসটি লিখে পাঠিয়েছিলাম। এবং আমি তাকে বলেছিলাম: ‘আমি আশা করছি যে, তিনি – অর্থাৎ ‘উমার – ধ্বংসাত্মক রাজতন্ত্র ও নিপীড়নমূলক স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের পর আমিরুল-মু’মিনীন হবেন। তাই তিনি আমার চিঠি ‘উমার বিন ‘আব্দুল ‘আযীযের কাছে নিয়ে গেলেন – যিনি এতে খুশি ও আনন্দিত হয়েছিলেন।”’
অতঃপর সেই হাদীসের সনদ নিয়ে আলোচনা করার পর শাইখ আলবানী বলেছেন: “আর এই হাদীসকে ‘উমার বিন ‘আব্দুল আযীযের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা আমার নিকট কিছুটা অসম্ভাব্য ও অমূলক মনে হয়েছে কারণ তাঁর খিলাফত এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের খিলাফতের সময়সীমা নিকটবর্তী ছিল। আর ঐ দুই রাজতন্ত্র – ধ্বংসাত্মক রাজতন্ত্র ও নিপীড়নমূলক স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র তখনও (ঐ সময়ে) আবির্ভূত হয়নি। আর আল্লাহই ভালো জানেন।

[৭] আবূ হুরায়রাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ’আনহু)-এর বর্ণিত হাদীস থেকে মুসলিম (৩/৮৪), আহমাদ (২/৩৭০ এবং ৪১৭) আর আল-হাকিম (৪/৪৪৭) লিপিবদ্ধ করেছেন।

[৮] আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীস থেকে আল-বুখারী (আল-ফিতান অধ্যায়ে) তা লিপিবদ্ধ করেছেন যা মারফূ’ (রাসূলুল্লাহ ﷺ পর্যন্ত পৌঁছেছে)।

Support The Da'wah In Bangladesh

Recent Posts

Recommended Readings

Discover more from Markaz Al-Imam At-Tahawee

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading