
u
রিযিক অন্বেষণের ক্ষেত্রে সহায়ক ১৫টি বৈধ উপায় বা মাধ্যম
১. ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)
এর প্রমাণ হলো নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর ক্বাওমের প্রতি তাঁর আহ্বানকে উদ্ধৃত করে মহান আল্লাহর বাণী:
فَقُلْتُ ٱسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُۥ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ ٱلسَّمَآءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيُمْدِدْكُم بِأَمْوَٰلٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّٰتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَٰرًا
“আমি বললাম, ‘সুতরাং তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, কারণ তিনি অতীব ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’’’[1]
ইস্তিগফারের ফলাফল হলো বৃষ্টি বর্ষণ (যার মাধ্যমে রিযিকের সৃষ্টি এবং এর সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়) আর ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততির বৃদ্ধিকরণকেও ইস্তিগফারের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
২. তাওবা (অনুশোচনা)
এর দলীল হলো মহান আল্লাহর বাণী:
وَأَنِ ٱسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوٓا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُم مَّتَٰعًا حَسَنًا إِلَىٰٓ أَجَلٍ مُّسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِى فَضْلٍ فَضْلَهُۥ وَإِن تَوَلَّوْا فَإِنِّىٓ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ
“আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তারপর (অনুশোচনাভরে) তাঁর দিকে ফিরে যাও, তাহলে তিনি একটা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদেরকে উত্তম জীবন সামগ্রী ভোগ করতে দিবেন ও প্রত্যেক আনুগত্যশীলকে তাঁর আনুগত্য অনুযায়ী পুরস্কৃত করবেন। আর যদি তারা ফিরে যায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তোমাদের উপর বড় এক দিনের আযাবের ভয় করছি।’’[2]
একইভাবে দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর জবানে মহান আল্লাহর বাণী:
وَيَٰقَوْمِ ٱسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوٓا إِلَيْهِ يُرْسِلِ ٱلسَّمَآءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَىٰ قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ
“হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তারপর তার দিকেই ফিরে আসো। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরও শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তিকে বৃদ্ধি করবেন, সুতরাং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।’’[3]
তাওবার ফলাফল হচ্ছে এই দুনিয়ায় উত্তম ভোগ-উপকরণ, আল্লাহর অনুগ্রহ, শ্রেষ্ঠত্ব বৃদ্ধি পাওয়া ও আকাশ থেকে বৃষ্টি ও রিযিক প্রেরণ। কিন্তু তাওবা কবুল হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে যেমন:
• গুনাহের স্বীকারোক্তি।
• গুনাহে নিপতিত হওয়ার কারণে অনুশোচনা।
• গুনাহের কাজে পুনরায় না ফেরার অভিপ্রায়।
• অন্যদের সাথে জড়িত এমন কোনো ক্ষতির সংশোধন।
• গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া।
• দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহ সকল গুনাহের ক্ষমাকারী।
৩. তাক্বওয়া (আল্লাহভীতি)
মহান আল্লাহর বাণী:
وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجْعَل لَّهُۥ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
“যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য (সকল সমস্যা থেকে উদ্ধারের) কোনো না কোনো পথ বের করে দিবেন। আর তিনি তাকে রিযিক দিবেন (এমন উৎস) থেকে যা সে ধারণাও করতে পারে না’’[4]
এবং মহান আল্লাহর বাণী:
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ ٱلْقُرَىٰٓ ءَامَنُوا وَٱتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَٰتٍ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ وَلَٰكِن كَذَّبُوا فَأَخَذْنَٰهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
“জনপদের অধিবাসীরা যদি ঈমান আনয়ন করত ও তাক্বওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম, কিন্তু তারা (নবী-রাসূলদেরকে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, ফলে তাদের কৃতকর্মের জন্য আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম।’’[5]
তাক্বওয়ার ফলাফল হলো সকল দুঃখ-কষ্ট দূরীকরণ, ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক প্রাপ্তি, আকাশ ও পৃথিবীর নেয়ামতের উন্মুক্তকরণ। তাল্ক বিন হাবীব (রাহিমাহুল্লাহ) তাক্বওয়ার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন:
“আল্লাহর প্রদত্ত নূরের উপর, আল্লাহর নিকট প্রতিদানের আশা রেখে আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজ করা এবং আল্লাহর প্রদত্ত নূরের উপর, আল্লাহর আযাবকে ভয় করে আল্লাহর অবাধ্যতাকে পরিত্যাগ করা।’’[6]
“আল্লাহর প্রদত্ত নূরের উপর”- এর অর্থ হলো তাঁর দীনের ইলম ও অন্তর্দৃষ্টির উপর, অর্থাৎ আপনি তাঁর আদেশ-নিষেধের ব্যাপারে জেনে তাঁর আনুগত্য করবেন ও (তাঁর) অবাধ্যতাকে বর্জন করবেন।
মহান আল্লাহর বাণী:
وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُۥٓ إِنَّ ٱللَّهَ بَٰلِغُ أَمْرِهِۦ قَدْ جَعَلَ ٱللَّهُ لِكُلِّ شَىْءٍ قَدْرًا
“যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করবেনই, আল্লাহ সব কিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।’’[7]
এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী:
“আল্লাহর উপর যেভাবে তাওয়াক্কুল করার কথা তোমরা যদি সেই অর্থে তা করতে তাহলে তিনি তোমাদেরকে এমন ভাবে রিযিক দিতেন যেভাবে পাখিদেরকে দিয়ে থাকেন। তারা ভোরবেলা খালি পেটে বের হয় অতঃপর ভরা পেট নিয়ে ফিরে আসে।’’[8]
আল্লাহর উপর ভরসা করার ফলাফল হলো বান্দার জন্য (তার সমস্ত প্রয়োজনে) আল্লাহই যথেষ্ট হওয়া, বান্দা নিজের জন্য যে কল্যাণ কামনা করে তা অর্জন করতে পারা এবং যেভাবে পাখিরা সহজে রিযিক লাভ করে সেভাবে রিযিক লাভ করতে পারা। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলের অংশ হলো শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত বৈধ উপায় ও উপকরণ ব্যবহার করা যেগুলোর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জিত হয়। সুতরাং, তাওয়াক্কুলের অর্থ হলো, সমস্ত বৈধ মাধ্যম ও উপকরণ ব্যবহারের পর চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করা, যেহেতু তিনি সমস্ত মাধ্যম, উপায় ও ফলাফলের স্রষ্টা।
৫. একজন ত্বলিবুল ইলমের পিছনে ব্যয় করা
তার প্রমাণ হলো আনাস বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) যিনি বলেছেন:
“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় দুই ভাই ছিলেন। তাদের একজন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে [দীন শেখার জন্য] আসতেন এবং অন্যজন তার ব্যবসায়িক পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তার পেশায় ব্যস্ত থাকতেন তিনি তার ভাই সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে অভিযোগ করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : “সম্ভবত তার (পিছনে ব্যয় করার) কারণে তোমাকে রিযিক দেওয়া হচ্ছে’’[9]
এই হাদীস থেকে যেই ফায়দাগুলো পাওয়া যায় তা হলো ত্বলিবুল ইলমের পিছনে ব্যয় করার প্রশংসনীয়তা। ত্বলিবুল ইলমের জন্য ব্যয় করা ব্যয়কারীর জন্য রিযিক আনয়ন করে। তবে ব্যয় করার পূর্বে সেই ত্বলিবুল ইলম সুন্নাহর অনুসারী কিনা তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে; যিনি সালাফে সালেহীনের আক্বীদাহ ও মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত, যেটার ভিত্তিতে তিনি ভালোবাসেন ও ঘৃণা করেন এবং যেটার ভিত্তিতে তিনি মিত্রতা ও শত্রুতা পোষণ করেন, যিনি আহলুস-সুন্নাহর উলামাদের ভালোবাসেন এবং তাদের সম্মান করেন এবং তাদের কাছ থেকে দীনী বিষয়াদি গ্রহণ করেন।
এর প্রমাণ হলো পরাক্রমশালী ও মহান আল্লাহর বাণী:
وَلَوْ أَنَّهُمْ أَقَامُوا ٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِم مِّن رَّبِّهِمْ لَأَكَلُوا مِن فَوْقِهِمِ وَمِنْ تِمْتِمِنِ هُمْ أُمَّةٌ مُّقْتَصِدَةٌ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ سَآءَ مَا يَعْمَلُونَ
“আর তারা যদি তাওরাত, ইঞ্জীল ও তাদের রবের কাছ থেকে তাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত করত, তাহলে তারা অবশ্যই তাদের উপর থেকে ও পায়ের নিচ থেকে রিযিক লাভ করত। তাদের একদল সরল পথের অনুগামী; আর তাদের অধিকাংশই এরূপ যে, তাদের কার্যকলাপ অতি জঘন্য।’’[10]
আল্লাহ যে আইন প্রণয়ন করেছেন তা মেনে চলা ও তার উপর অবিচল থাকা হলো (আকাশের) উপর থেকে ও (যমীনের) নিচ থেকে রিযিক প্রাপ্তির একটি উপায় যা শাসক ও শাসিত উভয়ের ক্ষেত্রে কোনো তারতম্য ছাড়াই প্রযোজ্য। আক্বীদাহ, ইবাদত ও মানহাজের বেলায়ও তাই।
এর দলীল হলো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী:
“তোমরা বেশি বেশি হজ্জ এবং ‘উমরাহ পালন করো কেননা তা দারিদ্র্যতা ও গুনাহকে এমনভাবে দূর করে দেয় যেভাবে হাপর লোহা, স্বর্ণ ও রৌপ্য থেকে গাদকে দূর করে দেয়। আর একটি কবুল হজ্জ (হজ্জে মাবরূর)-এর প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়।’’[11]
ঘনঘন হজ্জ এবং ‘উমরাহ সম্পাদনের ফলাফল হলো দারিদ্র্যতার বিমোচন, গুনাহের অপসারণ এবং জান্নাত প্রাপ্তি।
এর দলীল হলো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী:
“যে ব্যক্তি চায় তার রিযিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি পাক সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।’’[12]
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ফলাফল হলো রিযিকের প্রশস্ততা ও বরকতের বৃদ্ধিকরণ।
শাইখ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন:
“এর অর্থ হলো, যে ব্যক্তি তার আত্মীয়তার সম্পর্ককে রক্ষা করেছে আল্লাহ তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি তার আয়ু বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তার সদাচরণের পুরস্কার হিসেবে তার রিযিক প্রসারিত করে দিবেন।’’[13]
যদিও প্রত্যেকের আয়ুষ্কাল এবং জীবনসীমা নির্দিষ্ট এবং নির্ধারিত, তবে কিছু আসবাবের (উপায় ও মাধ্যম) দ্বারা তা বৃদ্ধি ও হ্রাস পায়, উদাহরণস্বরূপ কেউ যদি তার স্বাস্থ্যের কথা না ভেবে বিপজ্জনকভাবে জীবনযাপন করে তবে সে তাড়াতাড়ি মারা যেতে পারে কিন্তু সে যদি যত্ন ও সতর্কতার সহিত জীবনযাপন করে, সেক্ষেত্রে সে দীর্ঘজীবী হতে পারবে। একইভাবে, এই পার্থিব জীবনে, মানুষের পূর্বনির্ধারিত আয়ু এবং জীবিকায় কিছু উপায় ও মাধ্যম (আসবাব) সৃষ্টি করে, আল্লাহ তা’আলা, তাতে (আয়ু এবং জীবিকায়) বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটাতে পারেন, এবং এই পুরো বিষয়টি লাওহে মাহ্ফূযে আগে থেকেই লিপিবদ্ধ। সুতরাং, কোনো কিছুই তার নির্ধারিত সময় থেকে আগ-পিছ হয় না।
এর প্রমাণ হলো মহান আল্লাহ তা’আলার বাণী:
قُلْ إِنَّ رَبِّي يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ ۚ وَمَا أَنفَقْتُم مِّن شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ ۖ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
“বলো: আমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন অথবা তা সংকুচিত করেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দিবেন। তিনি শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা।’’[14]
এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী:
“মহান আল্লাহ বলেন: ‘হে আদম সন্তান, তুমি ব্যয় করো (তাহলে) তোমার জন্য ব্যয় করা হবে।’’[15]
আল্লাহর পথে (সাদাকাহর মাধ্যমে) ব্যয় করার ফলাফল হলো যা ব্যয় করা হয়েছে সেটার প্রতিস্থাপন এবং বান্দার পেছনে স্বয়ং আল্লাহর ব্যয় করা।
এর দলীল হলো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী:
“তোমাদের মধ্যকার গরীব, অসহায় ব্যতীত (আর অন্য কোনো মাধ্যমে) কি তোমাদেরকে সাহায্য করা হয় ও (তোমাদেরকে) রিযিক দেওয়া হয়?’’[16]
এবং তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী:
“তোমাদের মধ্যকার দরিদ্র, অসহায়দের মাধ্যমে আমার (নৈকট্য) তালাশ করো, কেননা তোমাদের মধ্যকার দরিদ্র, অসহায়দের মাধ্যমেই তোমাদেরকে রিযিক দেওয়া হয় ও (তোমাদেরকে) সাহায্য করা হয়।’’[17]
দরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি ভালোবাসা ও দয়া প্রদর্শনের উপকারিতা হলো রিযিকের প্রশস্ততা, আল্লাহর সাহায্য ও সম্মান।
এর প্রমাণ হলো মহান আল্লাহ তা’আলার বাণী:
وَمَن يُهَاجِرْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ يَجِدْ فِى ٱلْأَرْضِ مُرَٰغَمًا كَثِيرًا وَسَعَةً
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে সে পৃথিবীতে বহু প্রশস্ত স্থানসহ স্বচ্ছলতা লাভ করবে।’’[18]
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে সে কল্যাণ ও বরকত লাভ করবে এবং জীবিকার উপায়-উপকরণে প্রাচুর্যতা লাভ করবে।
এর দলীল হলো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী:
أَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْفَقْر
“আমি আপনার কাছে দারিদ্র্যতার ফিতনা হতে আশ্রয় চাই।’’[19]
এবং তাঁর বাণী:
تَعَوَّذوا باللهِ مِنَ الفَقرِ والقِلَّةِ، والذِّلَّةِ، وأنْ تَظلِمَ أو تُظلَمَ
“দারিদ্র্যতা, অভাব ও লাঞ্ছনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও, এবং তোমরা (অন্যদের) অত্যাচার করা থেকে (আশ্রয় চাও) বা অত্যাচারিত হওয়া থেকে (আশ্রয় চাও)।’’[20]
দু’আ হলো রিযিক উন্মুক্তকরণের চাবিকাঠি এবং তা দারিদ্র্যতা ও বালা-মুসিবতকে দূর করে।
এর প্রমাণ হলো মহান আল্লাহ তা’আলার বাণী:
وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِى فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُۥ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ أَعْمَىٰ
“অতঃপর যে ব্যক্তি আমার স্মরণ হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উঠাব অন্ধ বানিয়ে।’’[21]
এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী:
“একদল লোক যখন পরাক্রমশালী ও মহিমান্বিত আল্লাহর স্মরণের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়, তখন ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে ফেলেন ও রহমত দ্বারা আবৃত করে নেন এবং তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তীদের (ফেরেশতাদের) কাছে তাদের উল্লেখ করেন।’’[22]
যিকিরের ফলাফল হলো একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন। আল্লাহর নিয়মিত স্মরণ রিযিক ও জীবিকার মধ্যে সহজলভ্যতা ও প্রশস্ততা নিয়ে আসে।
সাখর আল-গামিদী বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“হে আল্লাহ আমার উম্মতকে (দিনের) প্রারম্ভে [দিনের প্রথম অংশে] বরকত দান করুন।’’[23]
আর যখনই তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনো অভিযানে লোক পাঠাতেন বা সৈন্যদল প্রেরণ করতেন, তিনি দিনের প্রথম ভাগে তা করতেন। সাখর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) নিজে একজন ব্যবসায়ী ছিলেন এবং দিনের প্রথম ভাগে তিনি তার কর্মীদের (ব্যবসার উদ্দেশ্যে) বাইরে পাঠাতেন, তাই তিনি সফল হয়েছিলেন এবং তার সম্পদ বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এর প্রমাণ হলো মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী:
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِى لَشَدِيدٌ
“আর স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য (আমার নেয়ামতকে) বাড়িয়ে দিব, আর যদি তোমরা কুফরী করো (তবে জেনে রেখো) আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।’’[24]
এবং তিনি, মহান আল্লাহ, আরো বলেন:
لَقَدْ كَانَ لِسَبَإٍ فِى مَسْكَنِهِمْ ءَايَةٌ جَنَّتَانِ عَن يَمِينٍ وَشِمَالٍ كُلُوا مِن رِّزْقِ رَبِّكُمْ وَٱشْقِ وَلَبَبَهٌٌۥبِّكُمْ وَٱشْكُرَةُ رَبٌّ غَفُورٌ فَأَعْرَضُوا فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ سَيْلَ ٱلْعَرِمِ وَبَدَّلْنَٰهُم بِجَنَّطَلْنَٰهُم بِجَنَّطَلْنَٰهُم بِجَنَّطَلْنَٰهُم بِجَنَّطَلْنَٰهُم بِجَنَّتَيْهِمْ جَنَّتَوَ خَلْنَاْ ذِنَّتَوْا ثْلٍ وَشَىْءٍ مِّن سِدْرٍ قَلِيلٍ ذَٰلِكَ جَزَيْنَٰهُم بِمَا كَفَرُوا وَهَلْ نُجَٰزِىٓ إِلَّا ٱلْكَفُورَ
“সাবাবাসীদের জন্য তাদের বাসভূমিতে ছিল একটি নিদর্শন! দু’টি উদ্যান- একটি ডান দিকে, অপরটি বাম দিকে। তাদেরকে বলা হলো : তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রদত্ত রিযিক ভোগ করো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। উত্তম শহর এবং ক্ষমাশীল প্রতিপালক। অতঃপর তারা আদেশ অমান্য করল। ফলে আমি তাদের উপর প্রবাহিত করলাম বাঁধভাঙ্গা বন্যা এবং তাদের উদ্যান দু’টিকে পরিবর্তন করে দিলাম এমন দু’টি উদ্যানে যেগুলোয় উৎপন্ন হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউ গাছ এবং কিছু কুল গাছ। আমি তাদেরকে এই শাস্তি দিয়েছিলাম তাদের কুফরীর কারণে। অকৃতজ্ঞ ব্যতীত আর কাউকে আমি এমন শাস্তি দেই না।’’[25]
আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া হলো অনুগ্রহ বৃদ্ধি এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকার কারণ। অকৃতজ্ঞতা যেমন শাস্তির কারণ, একই সাথে তা নেয়ামত ও অনুগ্রহ সমাপ্তিরও কারণ, যা সাবাবাসীদের ক্ষেত্রে ঘটেছে। আর কৃতজ্ঞ হওয়ার অর্থ হলো আল্লাহ যা কিছু আদেশ করেছেন ঐ সবকিছুতে তার আনুগত্য করা এবং তিনি যা কিছু নিষেধ করেছেন ঐ সবকিছুতে তার অবাধ্য হওয়া থেকে বিরত থাকা।
লিখেছেন শাইখ আবূ ইয়াদ্ব আমজাদ রফীক্ব
- সূরা নূহ: ১০-১২
- সূরা হূদ: ৩
- সূরা হূদ: ৫২
- সূরা ত্বালাক্ব: ৩
- সূরা আ‘রাফ: ৯৬
- আয-যাহাবী কর্তৃক আস-সিয়ার (৪/৬০১)
- সূরা ত্বালাক্ব: ৩
- তিরমিযী, আহমাদ এবং ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন।
- তিরমিযী বর্ণনা করেছেন
- সূরা আল-মায়িদাহ: ৬৬
- আহমাদ বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন
- বুখারী বর্ণনা করেছেন
- আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়া আল-ফাওযান (১/৯৮)
- সূরা সাবা’: ৩৯
- মুসলিম বর্ণনা করেছেন
- বুখারী বর্ণনা করেছেন
- তিরমিযী বর্ণনা করেছেন
- সূরা নিসা: ১০০
- বুখারী বর্ণনা করেছেন
- নাসায়ী, আবূ দাঊদ এবং ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন
- সূরা ত্ব-হা: ১২৪
- মুসলিম বর্ণনা করেছেন
- আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ এবং অন্যান্যরা তা বর্ণনা করেছেন, আলবানী সহীহ ইবনু মাজাহতে সহীহ বলেছেন
- সূরা ইবরাহীম: ৭
- সূরা সাবা: ১৫-১৭