Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

জারহ-ওয়া-তা’দীলের নীতিমালা

Share On :

ভূমিকা

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর যিনি সমস্ত সৃষ্টির রব। প্রশংসা, শান্তি ও নিরাপত্তা বর্ষিত হোক নবী এবং রাসূলদের মধ্যে যিনি সর্বোত্তম- আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সকল সাহাবীদের উপর। অতঃপর:

শাইখ রাবী বিন হাদি আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)- যিনি বর্তমান যুগের জারহ-ওয়া-তা’দীলের ইমাম হিসেবে সুপরিচিত – তাঁর কাছে উপস্থাপন করা একটি প্রশ্ন ও সেই সাথে তাঁর প্রদত্ত জবাবের অনুবাদ নিম্নে প্রদান করা হলো। বাংলাদেশে অবস্থানরত আমাদের সালাফী ভাই ও বোনদের জন্য আমি অনুবাদের কাজটি সম্পন্ন করেছি এই প্রত্যাশা নিয়ে যে ‘মানুষের মাঝে পারস্পরিক বক্তব্য গ্রহণ ও প্রত্যাখ্যান’ বিষয়ক কিছু নীতি যেন স্পষ্ট হয়ে যায়, তারা যেন স্বচ্ছতার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে ও বাংলাদেশের সালাফী যুব সমাজের মাঝে যে সমস্ত সন্দেহমূলক বিষয়াদির প্রচারণা চলছে, এর মাধ্যমে যেন সেগুলো দূরীভুত হয়ে যায়। সালাফী মানহাজের নীতিমালা যদি যুব সমাজের কাছে স্পষ্ট না করা হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তারা বিদআতী ও বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের কবলে পড়ে যাবে, তবে আল্লাহ যাদের প্রতি দয়া করবেন তাদের কথা স্বতন্ত্র। অতএব, এই অবস্থায় আমরা কি করে ঘুমিয়ে থাকতে পারি বা নিশ্চুপ থাকতে পারি, যখন কিছু মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে আমাদের যুবসমাজকে একদল নেকড়ে ছোঁ মেরে নিয়ে যেতে চায় এই বলে যে : ‘এটি ফিতনা সৃষ্টি করবে, এটি দাওয়াহকে কলুষিত করবে, আমাদের হিকমাহ অবলম্বন করতে হবে…’।

আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি যেন তিনি শাইখের (হাফিযাহুল্লাহ) বক্তব্য ও বিচক্ষণতা থেকে আমাদেরকে উপকৃত করে দেন, কেননা একমাত্র তিনিই হচ্ছেন সরল পথ প্রদর্শনকারী।

আবূ তাসনীম মৌসূফ বিন হাতিম

তাবদী’ এবং তাহযীর সংক্রান্ত নীতিমালা। কোনো ঐক্যমতের প্রয়োজন আছে কি? কেন অন্যান্য ‘আলিম তার ব্যাপারে কিছু বলেন নি?

প্রশ্ন: কিছু সংখ্যক ‘আলিম একজন ব্যক্তিকে বিদাতী বলে আখ্যায়িত করেন কিন্তু অন্যান্যরা (আলিম) তা করেন না। কিছু সংখ্যক ত্বালিবুল ‘ইলম, ঐ ‘আলিমের বক্তব্যকে অনুসরণ করেন যিনি তাকে বিদাতী হিসেবে আখ্যায়িত করেন না; তাহলে আমার জন্য কি ঐ ব্যক্তিকে তিরস্কার করা বৈধ?

আশ-শাইখ রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন:

“বর্তমানে এটি জনসাধারণের মাঝে একটি ফিতনা হিসেবে বিদ্যমান। বস্তুত, এটি দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে - যুব সমাজের মাঝে অনেকে সত্য জানার পরও বিষয়টি দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে; বারাকাল্লাহু ফীক।

সুতরাং এই শর্ত: 'তাকে তাবদী (কোনো ব্যক্তিকে বিদাতী হিসেবে আখ্যায়িত করা) অথবা জারহ (কোনো ব্যক্তির সমালোচনা) করার ক্ষেত্রে ইজমা (ঐক্যমত) থাকা অপরিহার্য' - এমন নীতি নির্ধারণ করা যাবে না। বরং জারহ ওয়া তা‘দীলের (সমালোচনা ও প্রশংসা) ক্ষেত্রে একজন 'আলিমের বক্তব্যই প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট।"

অনুবাদকের নোট:

সুতরাং ‘কাউকে বিদাতী বলে আখ্যায়িত করার ক্ষেত্রে অথবা কেউ বিদাতী হয়ে গেছে এই ফাতওয়া জারী হওয়ার পর তা গ্রহণ করার জন্য একটি ঐক্যমত গঠন করা প্রয়োজন’ বাহ্যিকভাবে এমন শর্তারোপের অর্থ দাঁড়ায় যে ‘উলামাগণ তাতে ঐক্যমত পোষণ করা না পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিকে বিদাতী বলা যাবে না।

বাহ্যিক দৃষ্টিতে কেউ মনে করতে পারে এর দ্বারা সতর্কতা ও তাক্বওয়া অবলম্বন করা হচ্ছে; কিন্তু ‘আলিমদের সমালোচনা থেকে বিদাতীদের রক্ষা করাই হচ্ছে এই ভ্রান্ত নীতির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। তাই যখন কোনো ‘আলিম দলীল-প্রমাণ সহকারে কোনো ব্যক্তির সমালোচনা করেন, ঠিক তখনই ঐ সমস্ত লোকেরা চিৎকার-চেঁচামেচি করে, ধার্মিকতার অভিনয় করে এবং সমালোচিত ব্যক্তির প্রতি নাকি অন্যায় করা হয়েছে দেখে তাকে প্রশ্রয় দেয়া শুরু করে এবং বলে, ‘ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আলিমরা ঐক্যবদ্ধ নন’ বা ‘অমুক অমুক আলিম ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলেন নি’ বা ‘সৌদি আরবের আল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ (সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ) ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলেনি, কেন বিষয়টি তাদের কাছে উপস্থাপন করা হলো না?’ এই সবই হলো সমালোচিত ব্যক্তিকে প্রশ্রয় দেয়ার পায়তারা। বিপথগামী লোক ও গোষ্ঠীকে প্রশ্রয় দেয়ার জন্যে এবং ‘উলামাগণের (প্রমাণ নির্ভর) সমালোচনা ও সতর্কবাণীকে বাতিল সাব্যস্ত করার লক্ষ্যে এটা তাদের চক্রান্ত। এখন কথা হচ্ছে এই নীতি তারা কোথা থেকে পেলো? এটিই কি সালাফদের নীতি ছিলো? একটি ঐক্যমত থাকতেই হবে বা নির্দিষ্ট সংখ্যক আলিমদের এই ক্ষেত্রে একমত হতে হবে বলে জারহ-ওয়া-তা‘দীলের বিশিষ্ট ‘উলামাগণ কি আদৌ কোনো নীতি নির্ধারণ করেছেন? এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এর উত্তর হচ্ছে ‘না’। বারাকাল্লাহু ফীক। সুতরাং লক্ষ্য করুন! তাহলে মিথ্যাচারী ও বিদাতীদের বিরুদ্ধে জারহ (সমালোচনা) এবং তাহযীর (সতর্কতা) গ্রহণে নিরুৎসাহিতকারী প্রতারকদের চক্রান্ত ও বিভ্রান্তি থেকে একজন সালাফী রক্ষা পাবে।

শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) আরও বলছেন:

সুতরাং, (বিশিষ্টজনের) একটি দল যখন তার সমালোচনা করেন এবং তাকে বিদাতী হিসেবে আখ্যায়িত করেন, তখন সত্য-সন্ধানী একজন মুসলিমের জন্য তাই যথেষ্ট হয়। কিন্তু একজন প্রবৃত্তির অনুসারীর জন্য কোনো কিছুই যথেষ্ট হয় না বরং সে মাকড়সার জালের সাথে ঝুলে থাকে।"

অনুবাদকের নোট:

সুতরাং যতই প্রমাণ নির্ভর ও বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন  করা হোক না কেনো, কোনো ব্যক্তির সমালোচনাকে গ্রহণ না করার জন্য প্রবৃত্তির অনুসারীরা বিভিন্ন রকমের অজুহাত তৈরি করে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে, কোনো বিদাতী অথবা কোনো পথভ্রষ্ট ব্যক্তিকে প্রশ্রয় দেয়ার জন্যই এই পন্থা অবলম্বন করা হয়।   শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) আরও বলছেন:

এমনটি সম্ভব যে (কিছু) লোকেরা নিজ ব্যস্ততার কারণে সমালোচনা সম্পর্কে অবগত নন;

অনুবাদকের নোট:

এখানে শাইখ উদাহরণ টেনেছেন যে কোন কোন কারণে একজন সালাফি ‘আলিম এমন ব্যক্তির প্রশংসা করতে পারেন যে ইতিমধ্যে (অন্য সালাফী ‘আলিম দ্বারা) সমালোচিত হয়েছে: এটি এই কারণে হতে পারে যে, যেই ‘আলিম তার প্রশংসা করেছেন তিনি ঐ ব্যক্তির সমালোচনার ব্যাপারে অথবা সমালোচনার কারণ সম্পর্কে অবগত নন; বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ ঐ ‘আলিমের হয়নি অথবা বিদাতীদের চক্রান্তমূলক কূট-কৌশল ও তাদের নীতিমালা ও অবস্থান পরিবর্তনশীল হওয়ার কারণে বিষয়টি তার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেনি।

  শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) আরও বলছেন:

পক্ষান্তরে কতিপয় ব্যক্তিবর্গ (আলিম) তার বিষয়টিকে অধ্যায়ন করেছেন এবং তাঁরা জানেন ঐ ব্যক্তি সমালোচিত হয়েছে এবং সে সমালোচনার যোগ্য কারণ সে একজন মিথ্যাবাদী; যে নিজের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে; কারণ সে উলামায় কিরামদের আক্রমণ করেছে; কারন সে সালাফী মানহাজ ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধাচারণ করার জন্য বাতিল নীতি উদ্ভাবন করেছে। এই সবকিছুই তাঁরা জানেন। এরপরও তাঁরা তাকে উপদেশ দিয়েছেন যদিও কিনা তাঁদের জন্য সেটা অপরিহার্য না; এরপরও তাঁরা উপদেশ দিয়েছেন ও সুস্পষ্ট করেছেন কিন্তু ঐ ব্যক্তি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অবশেষে তাকে বিদাতী হিসেবে আখ্যায়িত করতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন।

অনুবাদকের নোট:

বিদাতী ও তাদের দ্বারা প্রভাবিত লোকদের প্রায়ই দেখা যায় যে তারা সুন্নাহর ‘আলিম ও তাঁদের ছাত্রদের সমাজে এমনভাবে উপস্থাপন করে, মনে হবে যেন মানুষের ব্যাপারে অনর্থক ও বেপরোয়া সমালোচনা করে বেড়ানোই তাঁদের মূল কাজ। অথচ সত্যটি ঠিক এর বিপরীত। সত্য-সন্ধানী কোনো ব্যক্তি যদি ঐ সমস্ত বাতিলের নিরসন এবং সমালোচনার কারণগুলো (নিরপেক্ষ ভাবে) গবেষণা করেন তাহলে তিনি বুঝতে সক্ষম হবেন যে, ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেই ‘আলিমদের সমালোচনাগুলো খুবই যথাযথ ও সুনির্দিষ্ট। সেই সাথে তাদের ভুল-ত্রুটির পিছনে যেই কারণগুলো ছিলো সেগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রমাণস্বরূপ: বইপুস্তক এবং পৃষ্ঠা নম্বরের উদ্ধৃতি পর্যন্ত তাঁরা দেন। ‘আব্দুর-রহমান ‘আব্দুল-খালিক্ব, ‘আলী হাসান আল-হালাবী এবং আবুল হাসান আল-মা’রিবী এবং অন্যান্য বাতিলপন্থীদের বিরুদ্ধে শায়খ রাবী‘ কর্তৃক প্রণীত খণ্ডনগুলো তারই প্রমাণ বহন করে।

  শাইখ রাবী‘ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন:

অতএব, মাকড়সার সুতোয় ঝুলে থাকা ব্যক্তিটির জন্য আর কী অজুহাত থাকতে পারে? (সে বলে): ‘আল্লাহর কসম অমুক ব্যক্তি তার প্রশংসা করেছেন! আল্লাহর কসম তাঁরা (‘উলামাগণ) তাকে বিদাতী ঘোষণা করার ব্যাপারে একমত নন?!’

অনুবাদকের নোট:

যদি কোনো একক ‘আলিম নির্ভরযোগ্য প্রমাণ সহকারে কোনো ব্যক্তির সমালোচনা করেন তাহলে তা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে, এমনকি যার সমালোচনা করা হয়েছে তাকে অন্য কোনো ‘আলিম প্রশংসা করে থাকলেও (সেই সমালোচনাকে গ্রহণ করতে হবে); যার প্রমাণ হাদীস বিশারদদের নিম্নোক্ত এই নীতির মধ্যে নিহিত আছে: একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশদ সমালোচনা তার প্রশংসার উপর প্রাধান্য পাবে।

আল-হাফিয ইবনু হাজার তার নুখবাহ গ্রন্থে (পৃ. ৮৬, সংস্করণ আল-আ’ওয়াজ সবর, দার ইবনু হাজম) বলেছেন, ‘সমালোচনা প্রশংসার উপর প্রাধান্য পায়, যদি তা (সমালোচনা) ব্যাখ্যা সহ এমন একজনের কাছ থেকে আসে যিনি সমালোচনার কারণ সমূহের ব্যাপারে অবগত।’

(এখন প্রশ্ন হলো) যারা প্রশংসা করেছেন তাদের সংখ্যা যদি অনেক হয়ে থাকে তখন কি হবে? এই ক্ষেত্রে ‘উলামাগণ বলেছেন যে পূর্বে উল্লেখিত নীতিটি এখানেও প্রযোজ্য, যেমনটি আয-জারকাশী ব্যাখ্যা করেছেন আন-নুকাতে [(৩/৩৬২), ফুরায়েজ, আদওয়া’ আস-সালাফ)]:

‘যা সঠিক তা হলো সমালোচনাকে (প্রশংসার উপরে) প্রাধান্য দেওয়া হয়। এর কারণ আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। প্রশংসাকারীর সংখ্যা প্রচুর হওয়া সত্ত্বেও সমালোচনাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কারণ এতে অতিরিক্ত তথ্য রয়েছে যা প্রশংসাকারীর কাছে গোপন (অজানা)। বাস্তবে তার মধ্যকার ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো (এখনও) বিদ্যমান যদিও কিনা প্রশংসাকারীর সংখ্যা অনেক। অতএব, যদি কোনো একক ব্যক্তি কারও বিরুদ্ধে সমালোচনা করেন এবং অন্য শতাধিক ব্যক্তি তার প্রশংসা করেন, তবে সেই একক ব্যক্তির সমালোচনাকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।’

যদি একজন ব্যক্তির সমালোচনা একজন ইমাম বা একজন সিনিয়র ‘আলিমের প্রশংসার বিরোধী হয় তখন? উল্লিখিত নীতিটি তখনও বহাল থাকছে। এ বিষয়ে শাইখ রাবী‘ (হাফিযাহুল্লাহ) তাঁর তা‘লীক্ব ‘আলা কিতাব আল-জাওয়াব আল-কাফী’তে (টেপ২, www.rsalafs.com/?p=1721) বলেছেন:

“বিশদভাবে ব্যাখ্যাকৃত সমালোচনাকে (জারহ মুফাছ্ছার) সাধারণ প্রশংসার (তা’দীল মুজমাল) চেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এই নীতিগুলো ‘সমালোচনা ও প্রশংসা’ বিষয়ক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা অত্যাবশ্যক। উদাহরণস্বরূপ, একদিন আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) একজন ব্যক্তির প্রশংসা করলেন, যখন তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেলো যে সে আর প্রশংসার যোগ্য নয় তখন তিনি তার সম্পর্কে বললেন: ‘(সে একজন) খারিজী’। ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) একদিন অমুক অমুকের প্রশংসা করলেন তারপর তাদের ভুল তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেলো; অতঃপর তিনি তাদের সম্পর্কে বললেন: ‘তারা বাতিলের দিকে আহ্বানকারী।’ কিন্তু মিথ্যাবাদীরা এই সুযোগে শুধু প্রশংসাগুলোকে প্রচার করে আর সমালোচনাগুলোকে লুকিয়ে রাখে। আসুন আমরা ধরে নিচ্ছি যে, ইবনু বায এবং আলবানী (রাহিমাহুমাল্লাহ) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁদের প্রশংসাকে অমুক অমুকের ক্ষেত্রে অব্যাহত রেখেছেন। আর এসব প্রশংসা ছাড়া তাদের আর কিছুই নেই। আল-আলবানী বা ইবনু বায (রাহিমাহুমাল্লাহ) যাদের প্রশংসা করেছেন তাদের ভুল-ভ্রান্তিগুলো ও তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনাগুলো সুস্পষ্ট হওয়ার পরও কি মানুষজন চোখ বন্ধ করে থাকবে আর নিজেদের বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগানো বন্ধ করে দিবে? এই ক্ষেত্রে কি একজন মুসলিমের জন্য তার প্রতি অমুক অমুকের দেওয়া প্রশংসাকে আঁকড়ে ধরে থাকা বৈধ যার ব্যাপারে সুস্পষ্ট সমালোচনা রয়েছে? সমালোচনা সুস্পষ্ট…..।”

তিনি তাঁর তা‘লীক্ব ‘আলা কিতাব আল-হাদী আল-আরওয়াহতে (টেপ ২, www.rsalafs.com/?p=1721) আরো বলেছেন : “মুহাম্মাদ ইবনু জারীর বলেন, ইবনু হুমাইদ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ইবরাহীম ইবনুল মুখতার থেকে ইবন জুরায়জ থেকে তিনি আত্তা থেকে কা’ব ইবনু উজরাহ থেকে নবী (ﷺ) থেকে আল্লাহ তা’আলার বাণী [للذين أحسنوا الحسنى وزيادة] এর ব্যাপারে বর্ণনা করেছেন। এই বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতায় ইবনু হুমাইদ আছেন, তার সম্পর্কে কিছু মন্তব্য রয়েছে। ‘মুহাম্মাদ বিন হুমাইদ আর-রাযী’ রয়েছেন যার ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনদের কাছ থেকে কিছু মন্তব্য রয়েছে; ইমাম আহমাদ তার প্রশংসা করেছেন কিন্তু তিনি ছাড়া অন্যান্যরা তার সমালোচনা করেছেন এবং তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং তাকে দুর্বল আখ্যায়িত করার ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করেছেন। এবং যাঁরা তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন ইবনু খুজাইমাহ রাহিমাহুল্লাহ, যখন তাঁকে বলা হয়েছিল: ‘নিশ্চয়ই, আহমাদ তাকে সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তি বলে ঘোষণা করেছেন বা তার প্রশংসা করেছেন।’ তখন তিনি (ইবনু খুজাইমাহ) উত্তর দিলেন: ‘যদি আহমাদ তাকে চিনতেন ঠিক আমরা যেমন তাকে চিনি, তিনি তার প্রশংসা করতেন না।’ এবং এটিই হচ্ছে আহলুস-সুন্নাহ এবং আহলুল-হাদীছদের অনুসৃত মানহাজ: ‘যে জানে সে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ যে জানে না’ এবং ‘সমালোচনা প্রশংসার উপর প্রাধান্য পায়…।”

শাইখ রাবী‘ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন:

"যারা বিদাতী হিসাবে তাকে আখ্যায়িত করে না তারা বিভিন্ন শ্রেণীর: (ক) প্রথমত যারা তার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করতে অক্ষম তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত (খ) তাকে নিয়ে যারা গবেষণা করেছে অথচ তারা বাতিলের পক্ষ নিয়েছে- অথচ সেই সমস্ত লোকেরা (তার ব্যাপারে) গবেষণা করেছে এবং তারা জানে তার মধ্যে কি কি বাতিল রয়েছে, তবুও তারা ঐ বিদাতীকে প্রতিরক্ষা করে এবং (তার মধ্যে যে বাতিল র‍য়েছে তার বিরোধিতা করতে) তারা অস্বীকৃতি জানায়; এই শ্রেণীর লোকেরা হচ্ছে সবচাইতে অপদার্থ (গ) যারা নীরব। নীরবতা অবলম্বনের পক্ষে কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই। সুতরাং যারা তার সমালোচনা করেছেন ও দলীল-প্রমাণাদির দ্বারা তাদের সমালোচনাকে বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট করেছেন, নিরপেক্ষ ও সত্য সন্ধানী ব্যক্তির জন্য এই ক্ষেত্রে উচিত হবে সত্যকে তাদের (সমালোচনাকারীদের) কাছ থেকেই গ্রহণ করা।"​

অনুবাদকের নোট:

এই প্রসঙ্গকে কেন্দ্র করে এবার সত্যকে অস্বীকার করার জন্য এবং পথভ্রষ্ট দলসমূহ ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উলামায়ে কিরাম কর্তৃক সুস্পষ্ট সমালোচনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য, বাতিলপন্থীরা (যেমন হালাবী, মারিবীর অনুসারীরা) আরেকটি নীতি আবিষ্কার করে : ‘লা ইয়ালযামুনী’ নামক নীতি যার অর্থ হলো – ‘আমার জন্য গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক না।’ এই নীতির ব্যাপারে শাইখ রাবী বলেছেন (rabee.net): “সত্যকে, অকাট্য প্রমাণকে এবং সুস্পষ্ট দলীলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন ও অস্বীকার করার জন্য ও বাতিলের উপর তাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করার জন্যে এবং সেই সাথে সত্যকে প্রত্যাখ্যান ও এড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই মূলত একটি রক্ষা কবচ হিসেবে ‘লা ইয়ালযামুনী’ নামক নীতি তারা নিজেরাই তৈরী করে নিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ যতই সত্যের বিরুদ্ধাচারণ করুক না কেনো বা সত্য যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেনো; (তাদের নব-উদ্ভাবিত এই নীতির ভিত্তিতে) এখন সত্যের বিরুদ্ধাচারণ করা থেকে কোনো ব্যক্তি আর কখনই ফিরে আসতে পারবে না; তাদের অবস্থান এবং নীতিমালা যতই অনিষ্টকারী হোক তাতে কিছু যায় আসে না; বাতিলের প্রতিরক্ষা করতে এবং মিথ্যাচারের মাধ্যমে আহলুল-বিদ’আহ এবং আহলুল-হাওয়াকে প্রশ্রয় দেওয়াতে তাদের মোটেও কিছু যায় আসে না; মিথ্যাচার ও বাতিলের মাধ্যমে তারা সুন্নাহ’র অনুসারীদেরকে যতই তিরস্কার ও আক্রমণ করুক না কেনো এতে তাদের কিছুই যায় আসে না; তাদের কিছুই যায় আসে না, বিষয়টি যেমনই হউক না কেনো, যদি কোনো সালাফী দলীল-প্রমাণ নিয়ে আসে তারা সেটা গ্রহণ করবে না, বরং ‘লা ইয়ালযামুনী’ (আমার জন্য গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক না) নামক রক্ষা কবচের সাহায্যে তারা পুরোটাই অস্বীকার করবে।”

শাইখ রাবী‘ এখানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন যে, একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমালোচনাকে সুস্পষ্ট করতে হবে এবং যিনি সমালোচক তাকে তার সমালোচনার স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করতে হবে। প্রমাণ ছাড়া মানুষের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা যায় না এবং তা সমালোচনা হিসেবে অগ্রহণযোগ্য। বিশেষ করে যার বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হচ্ছে তিনি যদি আহলুস্-সুন্নাহর কেউ হন, তাহলে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই বিস্তারিত প্রমাণের প্রয়োজন। তাই এই কারণেই শাইখ ‘উবাইদ আল-জাবিরী (রাহিমাহুল্লাহ), শাইখ ‘আব্দুল্লাহ আল-বুখারী (হাফিযাহুল্লাহ) এবং অন্যান্য তালিবুল ‘ইলমদের বিরুদ্ধে মুহাম্মাদ বিন হাদী কর্তৃক প্রচারিত সমালোচনা অগ্রহণযোগ্য; তাঁদের বিরুদ্ধে তার সতর্কবার্তাও অগ্রহণযোগ্য কারণ তার সমালোচনার স্বপক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেন নি। ভিত্তিহীন সমালোচনার মাধ্যমে ‘উলামায়ে কিরামদের আক্রমণ করা সালাফী মানহাজের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। আস-সাবূনী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন (‘আক্বীদাতুস-সালাফ আসহাবিল-হাদীছ গ্রন্থে) : “আহলুস-সুন্নাহর একটি স্বতন্ত্র নিদর্শন হচ্ছে সুন্নাহর ইমাম, তার ‘আলিম, তার সাহায্যকারী এবং তার সহযোগীদের প্রতি তাদের অগাধ ভালোবাসা পোষণ।”

শাইখ রাবী‘ (হাফিযাহুল্লাহ) এই বলে তাঁর আলোচনা শেষ করেছেন :

“এবং যে মাকড়সার সুতো থেকে ঝুলে থাকে, যার কথা আমি আগেই বলেছি, পরাক্রমশালী ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর সামনে তার কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না। বারাকাল্লাহু ফীক"​

সূত্র:
https://rabee.net/alfatawi/سائل-يقول-رجل-بعض-العلماء-يبدعه-وبعضهم/ –
سائل يقول: رجل بعض العلماء يبدعه وبعضهم لا يبدعه وبعض الطلاب يتبعه اتباعا لقول من لا يبدعه فهل يجوز علي الإنكار عليه؟

বিস্তারিত পড়ুন:
● Manhaj.Com | Jarḥ & Ta’deel
● Where are the detailed proofs for the criticism (or jarḥ) against the Scholars of Sunnah? – Abu Khadeejah

Recommended Readings

Support The Da'wah in Bangladesh

May Allāh Bless You

%d